হাসানুজ্জামান পিয়াস: মনের রোগ দুশ্চিন্তা। এটি কেবল একটি রোগই নয়, অনেক রোগের কারণও বটে। অথচ রোগটিকে তেমন গুরুত্ব দিই না আমরা। ফলে দেহে এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। দুশ্চিন্তার কারণ, লক্ষণ ও ক্ষতিকর দিকগুলো দেখে নিন
কারণ
প্রাত্যহিক জীবনে নানা সমস্যার মুখোমুখি হই আমরা। এসব সমস্যা আপনাআপনিই আমাদের চিন্তাগ্রস্ত করে তোলে। এসব বিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তাই দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ। এ ধরনের দুশ্চিন্তা বংশগতও হতে পারে; তাহলে কিন্তু এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মানসিক চাপ বা দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া তিক্ত ঘটনা কিংবা অত্যধিক কাজের চাপ দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেয়।
লক্ষণ
অস্থিরতা: দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে সব সময় অস্থিরতা কাজ করে। কখনও স্বাভাবিক হতে পারে না। এক জায়গায় স্থির থাকতে পারে না
মনোযোগহীনতা: দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষ সর্বদা আনমনা হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট কোনো বিষয় বা দৈনন্দিন কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না।
ভয়: অনেকে একটু আওয়াজেই চমকে ওঠেন। কেউ জোরে কথা বললে ভয় পান। কাঁপতে থাকেন। গাড়ির হর্ন শুনলে কেঁপে ওঠেন। বাইরে ঘটে যাওয়া কোনো খারাপ ঘটনা নিজের বেলায়ও ঘটবেÑএই ভেবে নিজের মধ্যে ভীতি ডেকে আনেন।
অনিদ্রা: দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষের আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে অনিদ্রা। বিছানায় অনেক রাত পর্যন্ত এপাশ-ওপাশ করতে থাকে। এক সময় ঘুমিয়ে পড়লেও বারবার ঘুম ভেঙে যায়। অনেকে দুঃস্বপ্ন দেখেন।
চিন্তায় পরিবর্তন: সারাক্ষণ নানা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়। নেতিবাচক চিন্তা কুরে কুরে খায়। সাধারণত দু’একটা ছোটখাট ঘটনার ভিত্তিতেই গোটা পরিস্থিতি সম্বন্ধে মত স্থির করে ফেলেন দুশ্চিন্তাগ্রস্তরা। বেশিরভাগ সময় ঘটনাটির নেতিবাচক দিকটি নিয়েই ভাবেন।
অতিরিক্ত সতর্কতা: অনেকে প্রয়োজনীয় কাজ বাদ দিয়ে চিন্তায় ব্যস্ত সময় পার করেন। ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে তাদের চিন্তার কূলকিনারা থাকে না। ভাবতে থাকেন, যদি ভুল হয়ে যায়! তাহলে কী হবে?
অতিরিক্ত রাগ: দুশ্চিন্তায় রাগ বেড়ে যায়। মানুষের কথা অসহ্য লাগে। অনেকে অল্পতে রেগে যান। কেউ ভালো কথা বলতে চাইলেও বিরক্ত হন।
শারীরিক অসুস্থতা: কেউ কেউ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হন। যেমন অরুচি, দুর্বলতা, মাথা ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া, অনেকের আবার জ্বর থাকে না; অথচ জ্বর জ্বর মনে হয়। এ ধরনের মানুষ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়, ওষুধ খায় কিন্তু সুস্থ হয় না।
যেসব রোগ হতে পারে
রোগ প্রতিরোধে অক্ষমতা: দীর্ঘদিন দুশ্চিন্তায় ভুগলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। মাংসপেশিতে নানা রোগ হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন গিঁটে বা জয়েন্টে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আলসার: দুশ্চিন্তার কারণে পেটের বেশ কিছু সমস্যার মধ্যে আলসার অন্যতম। দুশ্চিন্তার কারণে পাকস্থলিতে আলসার হতে পারে। এর ফলে মনের ওপর অত্যধিক চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে পাকস্থলিতে ‘পেপসিন’ নামে হরমোন অধিক পরিমাণে ক্ষরণ হয় ও আলসার বেড়ে যায়।
উচ্চ রক্তচাপ ও হƒদরোগ: দুশ্চিন্তার কারণে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়। হƒৎযন্ত্রে নানা অসুখ বাসা বাঁধে। ব্রেন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান কারণ দুশ্চিন্তা।
মাথাব্যথা: মাথাব্যথার অন্যতম একটি কারণ দুশ্চিন্তা।
হাঁপানি: দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগের কারণে হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
জৈবিক সমস্যা: দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগের কারণে নানা ধরনের যৌন সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য মানুষের জৈবিক চাহিদা কমে যেতে পারে।
চর্মরোগ: অনেক সময় নানা ধরনের চর্মরোগেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায় দুশ্চিন্তা। বিভিন্ন ধরনের চুলকানি বা অত্যধিক ঘাম হওয়াও অনেক সময় দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগের কারণে হতে পারে।
Add Comment