নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীতে উন্নয়ন কাজসহ মহামারির পর ব্যস্ততা ও ঈদের কারণে যানজট বেড়েছে বলে উল্লেখ করে তা নিরসনে একটি কর্মপরিকল্পনার কথা জানিয়ে দু-এক দিনের মধ্যেই তা নিয়ন্ত্রণের আশা করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে ঈদুল ফিতরের আগে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থতি নিয়ে পর্যালোচনা সভা শেষে তিনি এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
যানজট মোকাবিলায় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যানজট নিরসনের জন্য ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ বিভাগ যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। আগামী সাত দিনে তারা কী করবে, তার একটি কর্মপদ্ধতিও তারা বের করেছেন। আশা করি দু-এক দিনের মধ্যে যানজট কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হবে।’
যানজটের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে অনেক উন্নয়ন কাজ চলছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভারগুলোর কারণে
কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। আমাদের এই যানজটের সেটি একটি কারণ। এরপর দীর্ঘদিন কভিডের পর সবকিছু খুলেছে, আবার ঈদও এসে গেছে। সবাই মার্কেটমুখী। ঘর থেকে বের হয়ে সবাই এসব জায়গায় যাতায়াত শুরু করেছেন। যানজটের কিছু কারণের মধ্যে এগুলোও কারণ।’
তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তার জন্য বাস, ট্রেন ও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ঈদ উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে যানজট নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, জেলা পুলিশ ও মেট্রোপলিটন পুলিশের টহল এবং গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে।’
মহাসড়কের পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘হাইওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আমাদের নিশ্চিত করেছেন ২৫ এপ্রিলের মধ্যে সব রাস্তা সচল হবে। যেখানে খানাখন্দ আছে, সেগুলোও রিপেয়ার করে দেবে। এটি যেন কার্যকর হয়, সেজন্য আগামী কাল বা পরশুর মধ্যে তারা আবারও বসবেন। যদি কোনো অসুবিধা পাওয়া যায়, সেটি চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা নেবে।’
ঈদযাত্রায় নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া যাতে আদায় করা না হয়, সেজন্য নিরাপত্তা বাহিনী নজর রাখবে। নসিমন-করিমনসহ ব্যাটারিচালিত গাড়ি যেন মহাসড়কে উঠতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ঈদের আগে পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে আলোচনার কথা তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রম মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে একটি সভা হয়েছিল। সেই সভায় বেতন-বোনাস পরিশোধ এবং ছুটির বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটি যাতে মেনে চলা হয়, আমরা সভায় সে বিষয়টিতে জোর দিয়েছি।’
ঈদের আগে ও পরে সড়ক-মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে কারখানাগুলোয় পর্যায়ক্রমে ছুটির ব্যবস্থা করার বিষয়ে আলোচনা হয় বলেও জানান তিনি।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমাদের বড় শিল্পগুলোকে একসঙ্গে শ্রমিকদের ছুটি না দিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি যে ছুটিটা কীভাবে দেবে। ছুটি যদি একসঙ্গে দেয়, তাহলে আমাদের হিসাবে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ ঢাকা ত্যাগ করবে। তারা শুধু শ্রমিক, এর সঙ্গে অন্য মানুষ তো আছেই। কাজেই যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। পর্যায়ক্রমে ছুটিগুলো দিলে সেটি কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হবে।’
আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, ঈদে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে ইউনিফর্ম পরা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে।
‘বিশেষ বিশেষ রাস্তা ও মোড়ে চেকপোস্ট স্থাপন এবং জালটাকার বিস্তার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি,’ বলেন তিনি।
এছাড়া ঈদের ছুটিতে কূটনৈতিক পাড়াসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং দেশের সব বন্দরে পুলিশের টহল জোরদার থাকবে।