Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 12:19 pm

দূষণ রোধে ঢাকাসহ আট মহানগরীতে শিল্পকারখানা নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ ও পানিদূষণ রোধে ঢাকাসহ আটটি মহানগরীতে শিল্পকারখানা স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হবে না। দেশে ১১০টি অর্থনৈতিক (ইকোনমিক) জোন তৈরি করা হচ্ছে। আট মহানগরীতে দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যায়ক্রমে সেখানে সরিয়ে নেওয়া হবে। এছাড়া নদীদূষণ ও দখলমুক্ত রাখতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জন্য বিশেষ বাহিনী গড়ে তোলা হবে।

গতকাল সচিবালয়ে নদীর নাব্য ও স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ৩৭তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সভা শেষে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এসব তথ্য জানান।

মন্ত্রী বলেন, পরিবেশ ও নদীর পানি দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে রিলোকেটেড (স্থানান্তর) করা হবে। ঢাকাসহ আটটি মহানগরীতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হবে না। এতে পরিবেশ ও পানিদূষণ কমে আসবে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য ইউটিলিটি সেবা পেতে ও দূষণ রোধে অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে।

তিনি বলেন, দেশে ১১০টি ইকোনমিক জোন হচ্ছে। ঢাকাসহ সব মহানগরীর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থনৈতিক জোনে যেতে হবে, যেভাবে হাজারিবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নতুন করে কোনো শিল্প যাতে বড় বড় শহরের মধ্যে গড়ে উঠতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা একটা নির্দেশনা দিচ্ছি। যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ইটিপি (বর্জ্য শোধনাগার) আছে, কিন্তু চালু রাখে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদফতর জরিমানা প্রভৃতি করেছে। আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নৌ-পরিবহনমন্ত্রী ও টাস্কফোর্সের সভাপতি শাজাহান খানের সভাপতিত্বে টাস্কফোর্সের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আবদুস সামাদসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তারা।

সভায় জানানো হয়, পরিবেশ ও নদীর পানিদূষণ রোধে সাভারস্থ ট্যানারির সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (সিইটিপি) ত্রুটিমুক্ত করতে শিল্প মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সিইটিপি সম্পূর্ণভাবে স্থাপন ও কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ঠিকাদারের বিল পরিশোধ না করতে সভায় নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধারে জরিপকাজ সম্পন্ন এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে আট সার্ভেয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নদীতীরে অননুমোদিত স্থানে স্থাপিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরের কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

এতে আরও জানানো হয়, বুড়িগঙ্গা নদীর সম্পূর্ণ অংশ, তুরাগ নদীর আংশিক এবং ধলেশ্বরী নদীর আংশিক সীমানা পুনর্জরিপ করা হয়েছে। আপত্তিকৃত এক হাজার ১৫৪টি পিলারের মধ্যে ৭৬২টি পিলারের পুনর্জরিপ কাজ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট আপত্তিকৃত পিলারের পুনর্জরিপ কাজ চলমান রয়েছে। সীমানা পিলার উচ্ছেদ বন্ধ করার জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা মহানগরের ৪৬টি খালের মধ্যে ২৬টি চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি খাল উদ্ধার, সংস্কার ও পাড় বাঁধাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে। ঢাকা শহরের খালগুলো খননের জন্য ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের কাছে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে।

নদী দখল ও দূষণ রোধে নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে শাজাহান খান বলেন, আমাদের জরিপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নদীর তীরে নতুন করে আর কোনো স্থাপনা কেউ যাতে নির্মাণ না করে সেজন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হবে। যারা নদী দখল-দূষণ করছে, তাদের বারবার বলার পরও তারা যদি আইন মোতাবেক না চলে, তাহলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেল-জরিমানা আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

নদী রক্ষায় নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী বলেন, নদীর তীরে দখল রোধে আমরা বিআইডব্লিউটিএ’র মাধ্যমে জনবল নিয়োগ করে তাদের যানবাহন দেব, যাতে তারা প্রতিনিয়ত মনিটরিংয়ের কাজটি করতে পারে। নদীপথে নিরাপত্তার জন্য নৌ-পুলিশ আছে। পাশাপাশি নিরাপত্তার প্রশ্নে বিআইডব্লিউটিএ’র একটি কর্মিবাহিনী তারা তৈরি করবে, সে ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ একটি মতামত আমাদের দেবে।