নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের পথে উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পুরো অংশের নিরবচ্ছিন্ন কাঠামো দৃশ্যমান হলো। গতকাল বেলা ১১টা ১৪ মিনিটে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কাছে দুটি (৫৮২ ও ৫৮৩) পিয়ারের মধ্যে ভায়াডাক্টের শেষ অংশটি বসানো হয়। এর মাধ্যমে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার টানা উড়ালপথ নির্মাণ শেষ হলো।
পিয়ারগুলোয় কংক্রিটের যে কাঠামো বসিয়ে যোগসূত্র তৈরি করা হয়, তাকে বলে ভায়াডাক্ট। এর ওপরই বসবে রেললাইন, তার ওপর দিয়ে চলবে ট্রেন। ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের দায়িত্বে নিয়োজিত ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে উড়ালপথের ওপর রেললাইন বসানো হয়। ওই অংশে পরীক্ষামূলকভাবে মেট্রোরেল চলাচল করছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে উড়ালপথের কাজ শেষ। এখন সেখানে রেললাইন বসানো, বিদ্যুৎব্যবস্থা স্থাপনসহ অন্যান্য কাজ শুরু হবে।
আগামী ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে মেট্রোরেল যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে বলে জানিয়েছে সরকার। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো পথে মেট্রোরেল চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের পথের নাম লাইন-৬। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে এটিকে কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করা হচ্ছে। বর্ধিত অংশটুকু ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চালু করা হবে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন সিদ্দিক গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, জানুয়ারির মধ্যে পুরো লাইন-৬-এর উড়ালপথ নির্মাণ শেষ করার লক্ষ্য ছিল। এই লক্ষ্য অর্জন একটা মাইলফলক। এর মাধ্যমে বড় একটা কাজ শেষ হচ্ছে। এখন ধীরে ধীরে মেট্রোরেলের নিচের পথ খুলে দেয়া যাবে।
মেট্রোরেল প্রকল্পের অগ্রগতি-সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ০৪ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯০ দশমিক ০৮ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণকাজ এগিয়েছে ৭৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত থাকছে ১৬টি স্টেশন। তবে কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করা হলে স্টেশন আরেকটি বেড়ে হবে ১৭টি।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের ৯টি স্টেশনের কাজ শেষ পর্যায়ে। বাকি সাতটি স্টেশনের কাজও বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান। এ পর্যন্ত দেশে এসেছে ১০ সেট ট্রেন। প্রতি সেট ট্রেনে ছয়টি করে কোচ রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে উত্তরা-আগারগাঁও অংশে এ ১০ সেট ট্রেন চলবে। আরও ১৪ সেট ট্রেন দেশে আসবে পর্যায়ক্রমে। আগামী বছর উত্তরা-মতিঝিল রুটে চলাচল করবে মোট ২৪ সেট ট্রেন।
তথ্যমতে, মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এখন প্রকল্পের কাজে আরও কিছু বিষয় যুক্ত করা হচ্ছে। ফলে আরও সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়তে পারে। সব মিলিয়ে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। মেট্রোরেলে যে ১৬টি স্টেশন থাকছে, এর নিচে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ফলে যাত্রীরা সহজে ওঠা-নামা করতে পারবেন না বলে মনে করছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। এজন্য স্টেশনের আশপাশে বাড়তি জমি অধিগ্রহণ করে যাত্রীদের চলাচল সহজ করা এবং পাশের ফুটপাত উন্নত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
এর বাইরে উত্তরাসহ কিছু স্টেশন ঘিরে আয়বর্ধক অবকাঠামো নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নির্মাণব্যয়ের মতোই সরকারের এ মেগা প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার খরচও তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে কেবল যাত্রী পরিবহন করে মেট্রোরেলের ব্যয় মেটানো কঠিন হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। এজন্য বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে বিপণিবিতান, হোটেল, বিনোদনকেন্দ্রসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
ডিএমটিসিএলের এমডি এমএএন সিদ্দিক বলেন, বাড়তি জমি অধিগ্রহণেই পাঁচ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় করতে হবে। এ ছাড়া ডলারের বিনিময়মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু ব্যয় বাড়াতে হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে মেট্রোরেল আর্থিকভাবে সচ্ছল হবে এবং যাত্রীদের যাতায়াত আরামদায়ক হবে। তবে বর্তমান নির্মাণকাজের কোনো ব্যয় বাড়বে না। বাড়তি ব্যয়টি আলাদা প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে।
উল্লেখ্য, মেট্রোরেল লাইন-৬ নির্মাণে প্রাথমিকভাবে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ দেয়ার কথা ছিল ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আর বাংলাদেশ সরকারের দেয়ার কথা পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তবে ব্যয় বৃদ্ধির পর সংশোধিত হিসাবে জাইকা ঋণ দেবে ১৯ হাজার ৬৭৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা, আর সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হবে আট হাজার ৪০৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা।