Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 5:01 pm

দৃষ্টিনন্দন শংকরপাশা শাহী জামে মসজিদ

 

শেয়ার বিজ ডেস্ক;মোগল আমলের নান্দনিক কারুকার্য এবং স্থাপত্যশৈলী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শংকরপাশা শাহী জামে মসজিদ। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মজলিশ আমিন ১৪৯৩ সালে হবিগঞ্জের উচাইল এলাকায় ৬ একর জমির ওপর এ মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু করেন। ১৫১৩ সালে গিয়ে শেষ হয় এর কাজ। সে হিসাবে মসজিদের বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি।

পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত মধ্যযুগীয় স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম নিদর্শন এ শংকরপাশা শাহী মসজিদটি সুলতানি আমলের স্থাপত্য নিদর্শনের চিহ্ন বহন করে। প্রাচীন মসজিদটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন।

মসজিদটি দৃশ্যত লাল বা রক্তিম বর্ণের হওয়ায় লোকজন এটিকে  লাল মসজিদ বলে থাকেন। আবার এটির অবস্থান একটি টিলাশৃঙ্গে। এ দুই বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণে মসজিদটিকে ‘লালটিলা মসজিদ’ও বলা হয়। পুনঃআবির্ভূত হওয়ায় অনেকেই এটিকে গায়েবি মসজিদও বলে থাকেন।

মসজিদের গায়ে থাকা শিলালিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, তৎকালীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মজলিশ আমিন ১৫১৩ সালে এর নির্মাণকাজ সমাপ্ত করেন। মসজিদের পাশেই রয়েছে তার সমাধি সৌধ। কালের বিবর্তনে মসজিদসহসংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকাটি এক সময় ঘন অরণ্য ভূমিতে পরিণত হয়। পরে অনাবাদি জঙ্গলবেষ্টিত এ এলাকায় জনবসতি গড়ে ওঠার সময় আবারও জনসম্মুখে আসে মসজিদটি।

সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদের প্রাচীন পাকা ভবনটি একচালাবিশিষ্ট, যার দৈর্ঘ্য ও প্রস্ত একই পরিমাপের। এর দৈর্ঘ্য সাড়ে ২১ ফুট আবার প্রস্থও ২১ ফুট ৬ ইঞ্চি। সামনের বারান্দার প্রস্থ তিন ফুটের একটু বেশি এবং এতে চারটি গম্বুজ রয়েছে। মূল ভবনের মধ্যভাগে একটি বিশাল আকৃতির গম্বুজ ও বারান্দার ওপর রয়েছে তিনটি ছোট গম্বুজ। মসজিদটিতে মোট ১৫টি দরজা ও জানালা রয়েছে যা পরস্পর একই আকৃতির এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ। উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ এই তিন দিকের দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় পাঁচ ফুট এবং পশ্চিমের দেওয়ালটি প্রায় দশ ফুট। এতে মোট ছয়টি পুরাকীর্তি কারুকার্য শোভিত স্তম্ভ রয়েছে, যা প্রধান কক্ষের চারকোণে ও বারান্দার দুই কোণে অবস্থিত। উপরের ছাদ আর প্রধান প্রাচীরের কার্নিশ ধনুক আকৃতিতে নির্মিত। মসজিদের দক্ষিণ পাশে একটি বড় দীঘি রয়েছে।

জানা যায়, পোড়া মাটির কারুকাজ সমৃদ্ধ মসজিদটির নির্মাণশৈলী অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন, চমৎকার ও মনোমুগ্ধকর। এর নান্দনিক কারুকার্য ও অসাধারণ নির্মাণশৈলী আধুনিকতাকে হার মানায়। পোড়া মাটির নকশা কাটা অসংখ্য ফলক ইমারতের দেয়ালে সাঁটানো রয়েছে। দেয়ালের বহিরাংশে পোড়া মাটির বিভিন্ন নকশা এবং অলঙ্করণ সহজেই দর্শনার্থীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

স্থানীয়রা জানান, প্রাচীন এ মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণের সব দায়িত্ব এখন সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের হাতে রয়েছে।