বে-টার্মিনাল প্রকল্প

দেড় বছরেও খাসজমি বরাদ্দ পায়নি বন্দর

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিং সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গত কয়েক বছর আগে হালিশহরে বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে আড়াই বছর আগে ব্যক্তি মালিকানাধীন ৬৮ একর জমি অধিগ্রহণ করে। দেড় বছর আগে কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটি বে-টার্মিনালের জন্য প্রস্তাবিত ৮০৩ একর খাসজমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয়। কিন্তু দেড় বছর হলেও এখনও জমি বুঝে পায়নি চবক। কবে বুঝে পাবে তাও নিশ্চিত নয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। বে-টার্মিনাল নির্মাণের মতো একটি অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পের ধীরগতি হতাশ করছে বন্দর ব্যবহারকারীদের।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরের তীরে দক্ষিণ কাট্টলি রাসমনিঘাট এলাকায় প্রায় ২১ হাজার কোটি ব্যয়ে নির্মাণ করা হবে ‘বে-টার্মিনাল’ প্রকল্প। এ প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত মোট ৮৭১ একর জমির মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন ৬৮ একর অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়। এ জমির জন্য ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে ৩৬৮ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষকে। অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ বে-টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য ৮০৩ একর খাসজমি বরাদ্দ অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটি। এতে প্রকল্পের জমি-সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের জটিলতার অবসান হওয়ার কথা থাকলেও জটিলতা রয়ে গেছে। এখন ওই জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এছাড়া সমুদ্র থেকে ভূমি পুনরুদ্ধার করার পর বে-টার্মিনালের মোট জমির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় দুই হাজার ৫০০ একর।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ২০১৩ সালে বে-টার্মিনাল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য জার্মান প্রতিষ্ঠান এইচপিসি ও সেলহর্নকে যৌথভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট এবং লে-আউট অনুযায়ী, প্রস্তাবিত টার্মিনালটি সাগরের তীরে অবস্থিত এবং ড্রাফট ১২ মিটার হবে। অনধিক ২৮০ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট পোস্ট প্যানাম্যাক্স জাহাজ এখানে সরাসরি ভিড়তে পারবে। বে-টার্মিনালটির ধারণক্ষমতা চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে। ফিজিবিলিটি স্টাডিতে বে টার্মিনালের জন্য এক হাজার ৫০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, এক হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল-১ এবং ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল-২ নির্মাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মোট জেটির সংখ্যা ১৩টি, যার দৈর্ঘ্য থাকবে তিন হাজার ৫৫৫ মিটার। সাগরের ঢেউ থেকে টার্মিনালটি রক্ষা করার জন্য একটি পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ব্রেকওয়াটার নির্মাণ করতে হবে। এ প্রকল্পের কাজ ২০১৮ সালে ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) প্রস্তাবিত অত্যাধুনিক বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্য পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটি (পিএসএ) বা পিএসএস টার্মিনাল ও সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালকে (আরএসজিটি) সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

একাধিক বন্দর কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর বছরের এখন ৩০ লাখের বেশি কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করছে। আর প্রতি বছর যে হারে আমদানি ও রপ্তানি বাড়ছে, সেভাবে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ হয়নি। ফলে দ্রুত সময়ে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। আসলে বড় প্রকল্প এককভাবে বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা আমাদের নেই। এছাড়া নানা জটিলতায় গতি পাচ্ছে না প্রকল্পটি। যদিও কিছু জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। এছাড়া খাসজমির জন্য মৌজা রেট হিসাব করে বে-টার্মিনালের জন্য প্রস্তাবিত সরকারি জমির মূল্য হিসেবে আমরা সরকারের কাছে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার গ্যারান্টি দিয়ে রেখেছি। কিন্তু দ্রততার সঙ্গে জমি অধিগ্রহণের কাজ হয়নি।

তারা আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে বঙ্গোপসাগরের হালিশহর উপকূলবর্তী এলাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে দুই দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার। আর প্রকল্পটি প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় জিটুজির মাধ্যমে নির্মাণ ও পরিচালিত হবে। আর প্রকল্পটি ২০২৫ সাল নাগাদ বাস্তবায়ন হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-ব্যবস্থাপক (ভূমি) জিল্লুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, বে-টার্মিনাল নির্মাণের জন্য এখনও খাসজমি বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। আর কবে পাওয়া যাবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।

জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ভূমি বরাদ্দ কমিটিতে অনুমোদন হওয়ায় এখন অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান। বর্তমানে চার ধারায় নোটিস দেওয়া হয়েছে, যা চলমান। এ কাজ শেষ হলে মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) মো জাফর আলম শেয়ার বিজকে বলেন, এ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। আপনি সচিব ওমর ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে সচিব ওমর ফারুকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০