দেড় বছরে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে ১২০ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকা-যশোর আকাশপথে সর্বনিন্ম বিমান ভাড়া ছিল জনপ্রতি দুই হাজার ৭০০ টাকা। আর বর্তমানে সেটি চার হাজার ৮০০ টাকা। অর্থাৎ দেড় বছরের এ রুটে টিকেটের দাম দুই হাজার ১০০ টাকা বেড়েছে। একই সময়ে বিমানে জেট ফুয়েলের দাম ৪৬ টাকা থেকে ১০০ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ দেড় বছরে ৫৪ টাকা (১২০ শতাংশ) বেড়েছে। এতে দেশের বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর ব্যয় বেড়েছে। সেইসঙ্গে কমেছে যাত্রীসংখ্যাও। আর এতে সংকুচিত হতে পারে আকাশপথে যাত্রা।

বাংলাদেশে জেট ফুয়েলের দাম গত সপ্তাহ থেকে আবারও বাড়তে শুরু করেছে। এ নিয়ে ১৭ মাসের মধ্যে ১৩ দফা দাম বৃদ্ধি পেল জেট ফুয়েলের। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রতি লিটারের নির্ধারিত মূল্য ছিল ৪৬ টাকা। এরপর ডিসেম্বরে ছিল ৪৮ টাকা। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দাম বাড়িয়ে করা হয় ৫৩ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে ৫৫, মার্চে ৬০ এবং এপ্রিলে ৬১ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়। মে মাসে লিটারে এক টাকা দাম কমানো হয়েছিল। জুনে আবার তিন টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৬৩ টাকা। জুলাইয়ে ৬৬, আগস্টে ৬৭, অক্টোবরে ৭০ এবং নভেম্বরে ৭৭ টাকা করা হয়। জানুয়ারিতে দুই দফায় কমানো হয়েছিল চার টাকা। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দুই দফায় ১৪ টাকা বাড়িয়ে ৮৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল জেট ফুয়েলের দাম।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি জেট ফুয়েলের দাম লিটারপ্রতি ১৩ টাকা বাড়ানোর পর বর্তমানে দাম দাঁড়িয়েছে লিটারপ্রতি ১০০ টাকা।

বেসরকারি বিমান পরিচালনা সংস্থাগুলোর মতে, ২০১২ সালে দেশের অভ্যন্তরীণ যাত্রী ছিল ছয় লাখ, যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২০ লাখ। কিন্তু করোনার কারণে পর্যটনশিল্পে স্থবিরতা দেখা দেয়। সবেমাত্র করোনার সংকট কিছুটা কাটিয়ে ওঠা শুরু হচ্ছিল। এরই মধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে অস্থির হয়ে ওঠে জ্বালানি তেলের বাজার। এমন সময়ে জেট ফুয়েলের দাম বাড়তে শুরু করেছে, যখন ধুঁকতে থাকা বিমানশিল্প আবারও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কারণ একটি উড়োজাহাজের পরিচালন ব্যয়ের ৪০ থেকে ৪৬ শতাংশ জ্বালানিতে ব্যয় হয়। ফলে অনিবার্যভাবে উড়োজাহাজ ভ্রমণ আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে এবং দিন শেষে যাত্রীদের এই বোঝা বহন করতে হবে।

এভিয়েশন খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের দেড় কোটি নাগরিক বিদেশে থাকে। সঙ্গে চিকিৎসা, হজ্বযাত্রী, পর্যটন খাতে বছরে গড়ে ১৫ লাখ যাত্রী বিদেশ ভ্রমণে যায়। এ কারণে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশকে ঘিরে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এসব বিদেশি উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো কম দামে জেট ফুয়েল পাওয়ায় স্থানীয় উড়োজাহাজ শিল্পের বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। গত ২০ বছরের পাঁচটি দেশীয় এয়ারলাইনস বন্ধ হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, করোনার কারণে পৃথিবীর সব দেশগুলো তাদের এভিয়েশন ও পর্যটন খাতে নানা রকমের প্রণোদনা দিয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ দেয়নি। বরং দেড় বছরের ১৩ বার জেট ফুয়েলের দাম বাড়ানো হয়েছে। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে যা ছিল ৪৬ টাকা, তা এখন ১০০ টাকা। অর্থাৎ ১২০ শতাংশ বেড়েছে। আমাদের জিডিপিতে তিন শতাংশ অবদান।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০