ইসমাইল আলী : ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এরপর থেকেই নিয়মিত কমছে রিজার্ভ। এর মধ্যে গত জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে বিপিএম-৬ (ব্যালান্স অব পেমেন্ট-৬) অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করা হচ্ছে। এতে প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ আরও কমে গেছে। বর্তমানে যে পরিমাণ রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে চার মাসেরও কম আমদানি চাহিদা মেটানো সম্ভব, যা ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিন্ম।
সম্প্রতি মাস্টারকার্ড ইকোনমিক ইনস্টিটিউটের (এমইআই) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ইকোনমিক আউটলুক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের রিজার্ভ কমেছে ৪৬ শতাংশের বেশি, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মোট রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। তবে এমইআই বলছে, বিপিএম-৬ অনুযায়ী ২০২৩ সালের জুনে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ দেড় বছরে বাংলাদেশের রিজার্ভ কমেছে ২১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার বা ৪৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনটিতে বিশ্বের আরও ১০টি দেশের রিজার্ভ হ্রাসের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় গত জুন পর্যন্ত দেড় বছরে মালয়েশিয়ায় রিজার্ভ কমেছে পাঁচ শতাংশের কিছু কম, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিলে পাঁচ শতাংশের চেয়ে কিছুটা বেশি। প্রায় সাত শতাংশ রিজার্ভ কমেছে ভারতের, সাড়ে সাত শতাংশের মতো কমেছে তুরস্কের, ১০ শতাংশ কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের।
দেড় বছরে ১০ শতাংশের কিছুটা বেশি রিজার্ভ কমেছে ফিলিপাইনের ও থাইল্যান্ডের কমেছে প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ। এছাড়া মিসরের রিজার্ভ এ সময়ে কমেছে প্রায় ২৩ শতাংশ ও চিলির কমেছে ২৫ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি কমেছে বাংলাদেশের। গত জুনে বাংলাদেশের কাছাকাছি রিজার্ভ ছিল মিসরের, যার পরিমাণ ২৪ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। যদিও গত এক মাস ২৩ দিনে বাংলাদেশের রিজার্ভ আরও কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২৩ আগস্ট বাংলাদেশের রিজার্ভ আরও কমে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া আগামী মাসে আকু পেমেন্ট পরিশোধের কথা রয়েছে। তখন ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার দায় শোধের পর রিজার্ভ ২২ বিলিয়নের নিচে নামবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মাস্টারকার্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জুনের রিজার্ভ দিয়ে বাংলাদেশের আমদানি চাহিদা মেটানো যাবে চার মাসেরও কমের; যা ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এতে আরও দেখানো হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের শুরুতে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলার। ওই সময় বিদ্যমান রিজার্ভ দিয়ে বাংলাদেশের ছয় মাসের আমদানি চাহিদা পূরণ করা যেত। ২০১৯ সালের শুরুতে রিজার্ভ কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৩২ বিলিয়ন ডলার। সে সময় রিজার্ভ দিয়ে সোয়া পাঁচ মাসের আমদানি চাহিদা পূরণ করা যেত।
২০২০ সালের শুরুতে রিজার্ভ আবারও বেড়ে প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলার দাঁড়ায়। সে সময় রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে ছয় মাসের আমদানি চাহিদা পূরণ করা যেত। ২০২১ সালের শুরুতে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪৩ বিলিয়ন ডলার। সে সময় রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে ১০ মাসের আমদানি চাহিদা পূরণ করা যেত। ওই বছর আগস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, যা দিয়ে সাড়ে ১২ মাসের আমদানি চাহিদা মেটানো যেত।
এরপর থেকে রিজার্ভ কমতে শুরু করে। ২০২২ সালের শুরুতে রিজার্ভ দাঁড়ায় প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে সে সময় সাড়ে ১১ মাসের আমদানি চাহিদা পূরণ করা যেত। ২০২৩ সালের শুরুতে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে সাড়ে সাত মাসের আমদানি চাহিদা মেটানো যেত। তবে জুনে তা অনেকখানি কমে সাড়ে তিন মাসে নেমে গেছে। রিজার্ভের এভাবে হ্রাস পাওয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।