দেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের গ্রোথ সেন্টার, পোলট্রি, ফিশারি এবং প্রায় আট হাজারেরও বেশি ইটের ভাটা রয়েছে। এরা কেউ করের আওতায় নেই। দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩৫ লাখ করের আওতাধীন। দেশের জনগণ কর দেওয়ার প্রতি উদাসীন; কারণ কর দেওয়ার সময় বিভিন্ন ধরনের হয়রানির স্বীকার হতে হয়। কিন্তু বিশ্বের উন্নত দেশের ১০০ শতাংশ জনগণ কর দেয়। দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিতে হলে কর প্রদানের হার বাড়াতে হবে। কারণ করের টাকা ও দেশ উন্নয়ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এ হাফিজ, ইউএফএস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ডিরেক্টর মোহাম্মদ জাকির হোসেন এবং জাতীয় কর আইনজীবী ফেডারেশনের সভাপতি ড. মো. নূরুল আজহার।
মোহাম্মদ এ হাফিজ বলেন, ২০১৮ সাল পুঁজিবাজার হচ্ছে প্রত্যাশা ও মিশ্র প্রত্যাশা সমন্বয়ের বছর। অর্থাৎ ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারে অনেক কিছু পেয়েছি আবার কিছু পাইনি। আর এটা হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ সবগুলো প্রত্যাশা একসঙ্গে অর্জন সম্ভব নয়। বিশেষ করে ২০১৮ সালে বড় অর্জন হয়েছে চীনের বিখ্যাত দুই স্টক এক্সচেঞ্জ দেশের পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো দেশের জিডিপির গ্রোথ রেট সাত দশমিক ৭৬ শতাংশ, মাথাপিছু আয় এবং ব্যাংক রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক থাকা সত্ত্বেও বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। বিদেশি বিনিয়োগ না আসার বিভিন্ন ধরনের কারণ রয়েছে। বিশেষ করে কিছু নীতিগত সমস্যা রয়েছে। এই নীতিগত সমস্যার সমাধান করতে হবে। তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ এবং দেশীয় ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হতে বাধ্য হবে।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, পুঁজিবাজার হচ্ছে র্স্পশকাতর জায়গা। আর পুঁজিবাজারে সূচকের ওঠানামা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটি সব দেশের পুঁজিবাজারে হয়ে থাকে। এখানে কেউ লাভ করবে আবার কেউ লোকসান করবে। তাই বিনিয়োগকারীদের জেনেশুনে, বুঝে বা দক্ষতার মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ টাকা বিনিয়োগকারীর এবং এর লাভ বা লোকসান তাকেই বহন করতে হবে।
মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর এ রকম অবস্থা হওয়ার কারণ আস্থাহীনতা বলব না, তবে এটি এক ধরনের সতর্কতার অভাব। পার্শ্ববর্তী দেশের পুঁজিবাজারে প্রায় ২৭ শতাংশ ও আমেরিকার পুঁজিবাজারে প্রায় ৫০ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ড অন্তর্ভুক্ত। ওইসব দেশের বিনিয়োগকারীরা যে পরিমাণ ইকুইটিতে বিনিয়োগ করেন, সেই পরিমাণ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেন। দেশের পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়।
মো. নূরুল আজহার বলেন, দেশের অর্থনীতির সবগুলো সূচক ইতিবাচক এবং দেশ উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে ধনীর সংখ্যাও এখন অনেক বেশি। অর্থাৎ তাদের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ২৫০ কোটি টাকার মতো। দেশে ২০ লাখের বেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী রয়েছেন। বিভিন্ন ধরনের গ্রোথ সেন্টার, পোলট্রি, ফিশারি এবং প্রায় আট হাজারেরও বেশি ইটের ভাটা রয়েছে। এরা কেউ করের আওতায় নেই। এখন কথা হচ্ছে, দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩৫ লাখ করের আওতাধীন। আসলে এখানে দেশের জনগণ কর দেওয়ার প্রতি বেশি উদাসীন থাকে; কারণ কর দেওয়ার সময় বিভিন্ন ধরনের হয়রানির স্বীকার হতে হয়। কিন্তু বিশ্বের উন্নত দেশের ১০০ শতাংশ জনগণ কর দেয়। দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিতে হলে কর প্রদানের হার বাড়াতে হবে। কারণ করের টাকা ও দেশ উন্নয়ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ