দেশবাসীর অভূতপূর্ব সাড়া না পেলে পদ্মা সেতু হতো না : প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ক্ষণে উৎসবের আনন্দ সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশবাসীর ‘অভূতপূর্ব’ সমর্থনেই স্বপ্ন সফল হয়েছে। গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুরের পল্লী জনপদ এবং কোটালীপাড়ার ‘বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি’র (বাপার্ড) উদ্বোধন করে পদ্মা সেতু নিয়ে নিজের প্রত্যাশার কথা বলেন তিনি। সূত্র: বাসস।

আসছে ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সবাইকে অনুরোধ করব, সবাই কিন্তু ধৈর্য ধরে কোনো রকম গাড়ি নিয়ে প্রতিযোগিতা বা কে আগে গেল, পরে গেল এই সব করবেন না। অর্থাৎ কোনো ধরনের দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সেই দিকে লক্ষ্য রেখে সবাই করবেন এবং উৎসবটা শুধু পদ্মার পাড়েই হবে না, সারাদেশে এ উৎসবটা করবেন। আমি চাচ্ছি বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় উৎসব হোক। কারণ এটা আমাদের জন্য একটা বিরাট চ্যালেঞ্জের ব্যাপার ছিল। পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক চুক্তি করলেও পরে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তা আটকে দেয়, যদিও সেই অভিযোগের কোনো প্রমাণ আর মেলেনি।’

দীর্ঘ টানাপড়েন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে নিজস্ব অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকায় নির্মিত এ সেতুতে এখন যান চলাচাল শুরুর অপেক্ষায় পুরো দেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দেয়ার পর দেশবাসী যে সমর্থন জানিয়ে এসেছে, সে জন্য অনুষ্ঠানে দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘এভাবে মানুষের যে অভূতপূর্ব সাড়া, সেটাই আমাকে সাহস জুগিয়েছিল। এটাই আমাকে শক্তি জুগিয়েছিল। কারণ মানুষের শক্তিতেই আমি বিশ্বাস করি। আজকে এই পদ্মা সেতু আমরা আমাদের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করতে পেরেছি। এত বাধা-বিঘœ অতিক্রম করে। কারণ এই পদ্মা সেতু নিয়ে কত কথা, কত অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করেছে। কানাডার কোর্ট মামলায় রায় দিয়েছেন যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যেসব অভিযোগ এনেছে সব ভুয়া, মিথ্যা। দুর্নীতির কোনো অভিযোগ এখানে টেকেনি। আমরা আমাদের পক্ষে রায় পেয়ে গিয়েছিলাম।’

সব বাধা পেরিয়ে সেতু প্রকল্প সফল হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সেতু নির্মাণের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই আর আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আমার দেশবাসীকে। সেই সময় দেশবাসীর থেকে এমন অভূতপূর্ব সাড়া যদি আমি না পেতাম, তাহলে এটা আমি করতে পারতাম না।’

পদ্মা সেতু গড়তে গিয়ে দুই রকম প্রতিবন্ধতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল সে কথা প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে খরস্রোতা নদী আমাজান এবং তারপর হচ্ছে পদ্মা। এখানে যে আমরা একটা সেতু করতে পারি এটা অনেকেরই ধারণা ছিল না। তার ওপর এই সেতুটা হচ্ছে দ্বিতল সেতু। নিচ দিয়ে ট্রেন যাবে ওপর দিয়ে গাড়ি যাবে এটাও একটা কঠিন কাজ।’

প্রকৃতির চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি ষড়যন্ত্রও যে মোকাবিলা করতে হয়েছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সেতু করতে গিয়ে সেখানে আমাদের ওপর একটা মিথ্যা অভিযোগ, দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এসেছিল। যেটা আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। আমরা এখানে দুর্নীতি করতে বসিনি। নিজের ভাগ্য গড়তে বসিনি। দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি, দেশের উন্নয়ন করতে এসেছি।’

সে সময় বিশ্বব্যাংকের ওই আচরণের জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে আমাদের দেশেরই একজন, যে আমাদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সুযোগ পেয়েছে, সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা আমার কাছ থেকে নিয়েছে। তারই বেইমানির কারণে এই পদ্মা সেতুর টাকাটা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ একজন ব্যক্তি একটা ব্যাংকে এমডির পদ, আমাদের তো প্রায় ৫২-৫৩টা ব্যাংক আছে। প্রত্যেক ব্যাংকেই তো একজন ম্যানেজিং ডিরেক্টর আছে। কতজন পারে বিদেশে টাকা পাঠাতে অথবা কাউকে লাখ লাখ ডলার ডোনেশন দিতে বা বিদেশ ঘুরে বেড়াতে? কে পারে?’

সরকারের তরফ থেকে ইউনূসকে কী ধরনের সুবিধা দেয়া হয়েছিল, তারও কিছু বিবরণ অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামীণ ফোন, এই ব্যবসাটা আমার আমলে আমি তাকে দিয়েছিলাম এবং তাকে অনেক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছিল। গ্রামীণ ব্যাংক যখন একেবারে বসে যাচ্ছিল, তখন সেই গ্রামীণ ব্যাংক চালু রাখার জন্য ৯৮ সাল আমাদের জন্য খুব তখন বিশাল বন্যা ছিল, সেই অবস্থায় আমাদের রিজার্ভ খুবই কম। সবদিক থেকেই অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ‘ইয়ে’ ছিল। অর্থনৈতিক মন্দা, তার ওপর দীর্ঘ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সেই অবস্থায়ও ওই ব্যাংকটা যাতে চালু রাখতে পারে প্রথমে ১০০ কোটি, তারপরে ২০০ কোটি এবং তারপরে আরও ১০০ কোটিÑএই ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে ব্যাংকটা চালু রাখার সুযোগ করে দিই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্রামীণফোনের ব্যবসাটা দিয়েছিলাম যে ফোনের লভ্যাংশটা গ্রামীণ ব্যাংকে যাবে। জীবনে এক পয়সা চাইনি। শ্রমিকদের পাওনা টাকাটাই দেয় না, তো আর কী দেবে? এটা হচ্ছে আমার দেশের নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ওই এমডির পদটা ছাড়বেন না। যদিও আইন আছে ৬০ বছর। তার তখন ৭০ পার হয়ে গেছে। ১০ বছর তিনি বেআইনিভাবে এমডি থেকেছেন, আর তারপর আরও থাকবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, ইউনূস উপদেষ্টা হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকে থাকতে পারেন, এমডি পদে আর নয়। সেটাও তিনি মানেন নাই। সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন। আর মামলায় যথাযথভাবে হেরেও গিয়েছিলেন। কারণ কোর্ট আর যাই পারুক, তার বয়স তো ১০ বছর কমাতে পারে নাই। যদি কমাতে পারত, হয়তো কমিয়ে দিত, এটা আমি জানি। কিন্তু কমাতে পারেননি, হেরেও গিয়েছিল।’

যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালীদের সঙ্গে ইউনূসের সখ্যের প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি তদবির করে এই ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে দিয়ে… হিলারি ক্লিনটন তার বন্ধু ছিল, সে ছিল আমেরিকার পরররাষ্ট্রমন্ত্রী, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে তিনি (ইউনূস) মোটা অঙ্কের চাঁদাও দিয়েছিলেন, অনুদান দিয়েছিলেন। জানি না এত টাকা সে কোথা থেকে পেল। কিন্তু সেটাও দিয়েছিল। কাজেই সেই আমেরিকান সরকারকে ধরে এই ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আমার পদ্মার টাকা বন্ধ করে দেয় এবং আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয় কানাডা কোর্টে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০