Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 8:38 pm

দেশি-বিদেশি দরপত্রে সাড়া নেই: রমজানে খেজুর সরবরাহ নিয়ে বিপাকে টিসিবি

 

নাজমুল হুসাইন: আন্তর্জাতিক বাজার থেকে খেজুর কিনতে গত নভেম্বরে দরপত্র আহ্বান করেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। কিন্তু কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখায়নি। অবশেষে গত মাসে দেশি কোম্পানিগুলোর কাছে খেজুর সরবরাহের দরপত্র আহ্বান করা হয়। তাতেও সাড়া মেলেনি। গতকাল মঙ্গলবার দরপত্র খোলার নির্দিষ্ট তারিখে টেন্ডার বাক্স খুলে কোনো দরপত্র পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

জানা গেছে, গত বছরও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে খেজুর কিনতে না পেরে শেষে দেশি প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া হয়েছিল। এবার তা-ও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যে বেশকিছু পণ্যের মজুত সম্পন্ন হলেও খেজুর নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে টিসিবি। এ অবস্থায় খোলাবাজার থেকে খেজুর কেনার চিন্তা করছে সংস্থাটি।

জানতে চাইলে টিসিবির প্রধান কর্মকর্তা (বাণিজ্যিক) আক্তার হোসেন গতকাল শেয়ার বিজকে বলেন, ‘১০০ টন খেজুর সরবরাহের জন্য আগে আন্তর্জাতিক টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল। তবে কোনো কোম্পানি দরপত্র জমা দেয়নি। তারপর মার্চের শেষে টেন্ডার দেওয়া হয় দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। তবে আজ টেন্ডার খোলার তারিখেও কোনো দরপত্র আসেনি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা টেন্ডার দেওয়ার পরে খেজুর সরবরাহকারী বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা তাদের ব্যবসায়িক নির্বাচনের কারণে দরপত্র দিতে পারেননি বলে আমাদের জানান। ফলে আগামী দুই-একদিনের মধ্যে আবার রি-টেন্ডার দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবার ব্যবসায়ীরা দরপত্র দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। এর পরও টেন্ডার না এলে খোলাবাজার থেকে খেজুর কেনা হবে। তবে রমজানে সরবরাহে কোনো সমস্যা হবে না।’

জানা গেছে, অনেক সময় টেন্ডারে অংশ নিয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পরিকল্পিতভাবে পণ্য সরবরাহ করে না টিসিবিকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে টেন্ডারে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের ‘পারফরম্যান্স গ্যারান্টি’র (পিজি) অর্থও বাজেয়াপ্ত করতে পারছে না টিসিবি। পারফরম্যান্স গ্যারান্টির অর্থ গচ্চা দিয়ে হলেও টিসিবিকে অকার্যকর করে রাখছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির অবস্থা দিন দিন নাজুক হচ্ছে।

জানতে চাইলে এবার খেজুর সরবরাহে অনীহার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, টিসিবির পণ্য ক্রয় প্রক্রিয়া সহজ নয়। পারফরম্যান্স গ্যারান্টি হিসেবে তারা ৫ শতাংশ হারে অর্থ জমা রাখে, যা বিরল ঘটনা। এছাড়া গত কয়েক বছর খেজুর ক্রয়ে ১০০ টনের দরপত্র দিয়ে শেষে তারা পুরোটা নেয়নি। এতে লোকসানে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি টিসিবির অর্থছাড়েও বিভিন্ন বিড়ম্বনা রয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সাথী ফ্রেশ ফুড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কয়েক বছর টিসিবিকে রমজানে খেজুর সরবরাহ করেছি। এবারও তারা খেজুরের দরপত্র দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করেছে। তবে আমরা আগ্রহ দেখাইনি।’

তিনি বলেন, কয়েকবার তারা ১০০ টনের টেন্ডার দিয়ে সম্পূর্ণ মাল নেয়নি। তাদের ডিলাররা খেজুর বেচতে পারে না। ফলে প্রায়ই দ্বিতীয় কিস্তিতে তারা পণ্য নেয় না। এছাড়া যেখানে খেজুর কোল্ড স্টোরে সংরক্ষণ করতে হয়, সেখানে টিসিবি সাধারণ গোডাউনে খেজুর মজুত করে বিক্রির আগপর্যন্ত। এতে আবার মান খারাপ হলে ব্যবসায়ীদের দায়ী করা হয়।’

সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অগ্রিম টাকা দিয়ে বিদেশ থেকে খেজুর কিনে টিসিবিকে দিই। তাদের নির্ধারিত দামে তেমন মুনাফাও হয় না। উল্টো টিসিবিকে পণ্য দিয়ে টাকা পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এসব কারণে কোনো ব্যবসায়ী টিসিবির দরপত্রে সাড়া দেননি। তারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এখনও।’

এদিকে রমজানের বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের এমন অবস্থায় শঙ্কিত ভোক্তারা। যেখানে বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবি ভূমিকা রাখবে, সেখানে তারাই পণ্য কিনতে পারছে নাÑএতে তাদের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন অনেকের। যদিও টেন্ডার দিয়ে পণ্য না পাওয়ার এমন ঘটনা টিসিবির নতুন নয়। বিভিন্ন শর্ত জটিলতাসহ সরবরাহকারীদের কারসাজি, তহবিলের অভাব আর ক্রয় প্রক্রিয়ায় আইনি জটিলতায় সরকারি এ বাণিজ্যিক সংস্থা প্রায়ই এমন পরিস্থিতিতে পড়ে।