দেশের অগ্রযাত্রায় তরুণদের কাজে লাগাতে টিআইবির ৯ সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক-পঞ্চমাংশ তরুণ ও যুবক। তাদের মধ্যে বেকারত্বের হার জাতীয় পর্যায়ের হারের চেয়ে দ্বিগুণ। এমন বাস্তবতায় দেশের অগ্রযাত্রায় তরুণ জনগোষ্ঠীকে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা নিশ্চিতে ৯ দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

গতকাল আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সুপারিশ করে টিআইবি। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত জনশুমারিকে বিবেচনায় নিলে তরুণ-যুব জনগোষ্ঠীর হাত ধরে দারুণ এক জনমিতিক সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। যদিও সেই সম্ভাবনার পুরোটাই নির্ভর করে এই বিপুল তারুণ্যকে কতটা কার্যকরভাবে দক্ষ করে কাজের সুযোগ তৈরি করে দেয়া যাচ্ছে, তার ওপর। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সুখকর অবস্থায় নেই তার বড় প্রমাণ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রকাশিত ‘দ্য গ্লোবাল এমপ্লয়মেন্ট ট্রেন্ডস ফর ইয়ুথ, ২০২২’-এর তথ্য।

আইএলও’র প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক জানান, বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। যেখানে জাতীয় পর্যায়ে বেকারত্বের হার মাত্র ৪ দশমিক ২ শতাংশ। গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনার প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর বড় অংশই তরুণ। কিন্তু বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে কর্ম-উপযোগী করার বিষয়ে এখনও কোনো সমন্বিত উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, যা সত্যিই হতাশার। যদিও দেশের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় এ উদ্যোগ নেয়া সবচেয়ে জরুরি।

দেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা দক্ষতা তৈরিতে ব্যর্থ হচ্ছে, এমন বাস্তবতার কথা স্মরণ করিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপ বলছে, দেশে ৪৭ শতাংশ শিক্ষিতই বেকার, যার বড় কারণ হচ্ছে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা যাচ্ছে না প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে। এই সমস্যা ধীরে ধীরে প্রকট হয়ে উঠলেও তা সমাধানে সমন্বিত কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি, যা সত্যিই উদ্বেগের।

এসব সমস্যা সমাধানে টিআইবির পক্ষ থেকে ৯টি সুপারিশ করা হয়।

এগুলো হলোÑ

১. আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী তরুণ জনগোষ্ঠীকে কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত ও কারিগরিভাবে দক্ষ করে তুলতে হবে।

২. আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও নারী শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষাগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবন্ধী, আদিবাসী ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. জাতিসংঘের সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।

৪. স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে যেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত থেকে তরুণরা কর্মহীন হয়েছে, সেগুলো চালুর উদ্যোগ নিতে হবে।

৫. তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প পেশার (যেমন আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং) জন্য কর্মহীন তরুণ বা নতুন গ্র্যাজুয়েটদের প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিতে হবে।

৬. সরকারি-বেসরকারি যেসব চাকরির নিয়োগ, পরীক্ষা ও যাচাই বন্ধ রয়েছে, অবিলম্বে বিশেষ ব্যবস্থায় সেগুলোর প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নিতে হবে।

৭. সব চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত এবং মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৮. কভিডের কারণে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে সরকারিভাবে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

৯. তরুণসমাজসহ সব নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আইন ও নীতিকাঠামোর প্রয়োজনীয় আমূল সংস্কার করতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০