দেশের আমদানি ও রপ্তানিতে বেড়েছে গতি

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে স্থবির হয়ে পড়েছিল শিল্প-বাণিজ্যের গতি। বন্ধ ছিল অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন প্রক্রিয়া। সংকোচিত হয়েছে কর্মসংস্থান। এমনকি প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিলেন শিল্পোদ্যোক্তারা। প্রায় দুই মাস পর আস্তে আস্তে সচল হতে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনের চাকা। এর মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ না কমলেও দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে গতি বেড়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আমদানি। একই সময়ে বাড়ছে রপ্তানির পরিমাণ। এতে আশাবাদী হচ্ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশে মার্চ মাসে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল এক লাখ ২৬ হাজার ৬৫৯ ইউনিট (একক)। আর পরের মাসে করোনার প্রভাবে কমে হয়েছিল মাত্র ৭৩ হাজার ৩১৭ ইউনিট কনটেইনারের। একইভাবে মে মাসে এক লাখ দুই হাজার ১৭৮ একক এবং জুনে এক লাখ ৯৮৪ একক।

অন্যদিকে একই বন্দর দিয়ে মার্চ মাসে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল এক লাখ ২৩ হাজার ১০ একক। পরের মাসে করোনার প্রভাবে তা কমে এসেছিল মাত্র ৫৯ হাজার ৬০৪ একক কনটেইনার। আর মে মাসে লাখ দুই হাজার ৬২৩ কনটেইনার এবং জুনে এক লাখ ১৮ হাজার ১৬৬ কনটেইনার। একই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ছন্দপতন হয়েছিল। এর মধ্যে মার্চ মাসে আমদানি ও রপ্তানিবাহী মোট কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছিল এক কোটি দুই লাখ ৬৪ হাজার ৪০২ মেট্রিক টন; যা করোনার প্রভাবে এপ্রিল মাসে কমে হয়েছে মাত্র ৭০ লাখ ২৪ হাজার ২৫ মেট্রিক টন। আর মে মাসে আরও কমে হয়েছিল ৫৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯১৫ মেট্রিক টন এবং জুন মাসে কিছুটা বেড়ে হয়েছিল ৬৩ লাখ ৯৫ হাজার ২৪২ মেট্রিক টন।

জানা যায়, প্রধান সমুদ্রবন্দরের মার্চ মাসে কনটেইনার ও কার্গোবাহী মোট জাহাজ আসে ৩৬৬টি। আর করোনার প্রভাবে কমে এপ্রিল মাসে জাহাজ আসে ২৫৭টি। একইভাবে মে মাসে ৩৪টি কমে মোট জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২২৩টি। আবার জুন মাসে ১৪টি বেড়ে মোট জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২৩৭টি।

বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) মহামারির মধ্যেই কারখানা-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করার একটা সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল। পাশাপাশি বহুমাত্রিক প্রণোদনা দিয়ে অর্থনৈতিক অর্থগতিকে সুসংহত রাখার জন্য সরকার কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এ সময় একদিনও বন্দর বন্ধ ছিল না। যার ফল দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম কভিড-১৯-এর মধ্যেই কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড গড়ল। তবে সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণে হয়তো কিছুটা বেকায়দায় পড়তে হয়েছিল বন্দরকে। তখন কনটেইনারের জট সৃষ্টি হয়েছিল। আর এখন এপ্রিল ও মে তুলনায় আমদানি ও রপ্তানি বাড়ছে; যা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পিএইচপি ফ্যামিলির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন শেয়ার বিজকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে এপ্রিল ও মে মাসে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ভয়াবহ ছন্দপতন হয়। তখন আমদানি পণ্য বিভিন্ন জায়গায় আটকে যায়। এতে উৎপাদন ও বিক্রয় তলানিতে নেমেছিল। যদিও এখন পরিস্থিতি অনেক উন্নত হয়েছে। এর মধ্যে কারখানাগুলোর উৎপাদন স্বাভাবিক হয়েছে। পাশাপাশি বিক্রয় ৩৫-৪০ শতাংশ বেড়েছে। কারণ করোনা স্বাভাবিক হয়নি এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা চলছে। আশা করছি আর কিছুদিন পর সার্বিক পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। তখন বিক্রয় প্রত্যাশার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি হবে। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ ছিল প্রশংসাযোগ্য।

তিনি আরও বলেন, এখন আগের মতো এলসি করছি। তবে কিছু কিছু ব্যাংকে ডলার সংকট আছে বলে জানিয়েছেন। আর সঠিকভাবে প্রণোদনা বিতরণ হচ্ছে কি না, তা ভালোভাবে নজরদারি করতে হবে। আর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য আরও সহায়ক কর্মসূচি নিতে হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম শেয়ার বিজকে বলেন, গত মার্চ পর্যন্ত আমাদের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় সাত শতাংশ। পরে কভিট-১৯-এর কারণে প্রবৃদ্ধি অনেক কমেছিল। এ সময়ে কনটেইনার জট সৃষ্টি হয়েছিল। আবার এ জট কাটানোর জন্য বেসরকারি ডিপোগুলোয় কনটেইনার রাখা হয়। তা না হলে আমাদের প্রায় ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হতো। এছাড়া আমাদের সক্ষমতা আগের চেয়েও অনেক বেড়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০