উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে করপোরেট ট্যাক্স বেশি। এই করপোরেট ট্যাক্স বেশি রাখার দুটি কারণ। প্রথমত, এখনও আমাদের অনেকের মধ্যে কর না দেওয়ার মানসিকতা আছে এবং দ্বিতীয়ত, দেশের কর আইন ততটা সমৃদ্ধ নয়। আমাদের দেশের আয়কর আইনটি করদাতাবান্ধব নয়। তাছাড়া আয়করের বিষয়টি মানুষ ভয় পায়। এ ক্ষেত্রে ভয় যত কমিয়ে দেওয়া যাবে, মানুষ তত বেশি কর দেবে। আর এসব কারণে সরকার রেট বেশি রেখে ট্যাক্স আদায়ের চেষ্টা করে, যেটি আসলে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নয়। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. ফোরকান উদ্দিন, এফসিএ। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেন হাসিব হাসান।
মো. ফোরকান উদ্দিন বলেন, উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে করপোরেট ট্যাক্স বেশি। এই করপোরেট ট্যাক্স বেশি রাখার দুটি কারণ আছে। প্রথমত, এখনও আমাদের অনেকের মধ্যে কর না দেওয়ার মানসিকতা আছে এবং দ্বিতীয়ত, দেশের কর আইন ততটা সমৃদ্ধ নয়। ট্যাক্সের আইন যারা প্রণয়ন করেন তারা এটিকে করদাতাবান্ধব না করে কর্মকর্তাবান্ধব আইন করেছেন। তাছাড়া এই বিষয়টি মানুষ ভয় পায়। এ ক্ষেত্রে ভয় যত কমিয়ে দেওয়া যাবে মানুষ তত বেশি কর দেবে। আর এসব কারণে সরকার রেট বেশি রেখে ট্যাক্স আদায়ের চেষ্টা করে, যেটি আসলে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নয়। অর্থমন্ত্রী এখন ট্যাক্স রেট কমিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করছেন। এটি কমানোর পাশাপাশি সরকারের রেভিনিউকে যদি একটি প্রধান ধারায় রাখতে হয়, তাহলে আইনটিকে যুগোপযোগী করতে হবে। সম্প্রতি আইসিবির সঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান, জয়েন্ট স্টক এবং গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানের একটি বৈঠক হয়। সেখানে আইসিবি বলেছে, যেখানে এক লাখের ওপরে কোম্পানি রেজিস্টার করা আছে, সেখানে আইসিবির হিসাব অনুযায়ী অডিট করা হয় ২০ থেকে ৩০ হাজার কোম্পানির। তাহলে বাকি কোম্পানিগুলোর অডিট করছে কারা? এসব কোম্পানি খুঁজে পাওয়ার জন্য সফটওয়্যারভিত্তিক প্রোগ্রাম তৈরি করা উচিত, যেখান থেকে এনবিআর, আইসিবি ও আরজেএসসি দেখতে পারবে। কারণ এই তিনটি জায়গাতেই রিপোর্টগুলো যাচ্ছে। আর এটি করা গেলে যারা জাল রিপোর্ট দিচ্ছে তারা ধরা পড়বে এবং যারা দিচ্ছে না তাদেরও পাওয়া যাবে। আমাদের ইনকাম ট্যাক্স আইনে ডিভিডেন্ডের একটি সংজ্ঞা দেওয়া আছে। তা হচ্ছে, একজন পরিচালক অথবা শেয়ারহোল্ডার যদি কোনো বেসরকারি কোম্পানি থেকে ঋণ নেয় এবং সেই ঋণের জন্য তার ওই কোম্পানিতে যে মুনাফা আছে সেই মুনাফার অংশ থেকে তাকে ট্যাক্স দিতে হবে লভ্যাংশ হিসেবে। এখন কথা হচ্ছে, এটি কোন আইন হলো এবং কোন দৃষ্টিতে কীসের ভিত্তিতে এই আইন, সেটাই আসলে চিন্তার বিষয়। তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে স্থানীয়ভাবে বিনিয়োগ না বাড়ালে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে না, কারণ তারা আস্থা পাবে না। আর স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়াতে গেলেই নতুন উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রণোদনা দিতে হবে, যাতে তারা চাকরির পেছনে না ছুটে ব্যবসায় উৎসাহিত হয়। আমাদের যদি অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হয়, তাহলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী যারা আছে বা মাইক্রো লেভেলে যে কারখানাগুলো হবে তাদের অবশ্যই কর ছাড় দিতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে তাদের জন্য সেরকমভাবে কোনো কর ছাড় দেওয়া হয় না। যারা ছোট আকারে কারখানা করবে তাদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা থাকা উচিত বলে মনে করি। তাহলেই যুবকরা চাকরি খোঁজার চেয়ে বেশি করে ব্যবসার দিকে এগোবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম