সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশে আমদানির মাধ্যমে জ্বালানি তেলের চাহিদার শতভাগ পূরণ করা হয়, যা সরবরাহের পর পরিশোধিত করে গ্রাহকপর্যায়ে বিক্রি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সদ্যবিদায়ী (২০২১-২২) অর্থবছরে মোট ৬৮ লাখ টন জ্বালানি তেল বিক্রি করে বিপিসি। এর মধ্যে শুধু ডিজেল বিক্রি করে প্রায় ৪৯ লাখ টন, যা দেশের ইতিহাসে একক বছর হিসেবে সর্বোচ্চ বিক্রি। এর মধ্যে পরিশোধিত ডিজেল আমদানি ৪০ লাখ টন এবং ৯ লাখ টন স্থানীয়ভাবে পরিশোষণকৃত। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ডিজেল বিক্রি হয়েছিল ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার টন। এ ডিজেলে লিটারপ্রতি লোকসান হচ্ছে ৫৭ টাকা করে।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, দেশের কৃষি উৎপাদন, শিল্প প্রক্রিয়া, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন, গৃহস্থালি ও অন্যান্য কাজে জ্বালানি চাহিদা জোগান নিশ্চিত করে বিপিসি। সদ্যবিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের বিপিসি মোট ৬৮ লাখ টন জ্বালানি তেল বিক্রি করে। এর মধ্যে শুধু ডিজেল বিক্রি করে প্রায় ৪৯ লাখ টন, যা একক বছর হিসেবে সর্বোচ্চ বিক্রি, যা আগের অর্থবছরে ছিল প্রায় ৪৬ লাখ মেট্রিক টন।
জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪০ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৫ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল বিক্রি করে বিপিসি। অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পরে গত অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ডিজেল ব্যবহƒত হয়। এ ডিজেলের লিটারপ্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে ৫৭ টাকা করে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ১৩৭ টাকায় কিনে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছে ৮০ টাকায়।
জানা যায়, বিপিসি গত অর্থবছরে প্রায় ৪০ লাখ টন শুধু ডিজেল আমদানি করে। এ ছাড়া পরিশোধিত ফার্নেস অয়েল, পেট্রলসহ আরও কিছু তেল আমদানি করতে হয়। এসব তেল সরবরাহ করে কুয়েতের কুয়েত পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (কেপিসি), মালয়েশিয়ার পেটকো ট্রেডিং লাবুয়ান কোম্পানি লিমিটেড (পিটিএলসিএল), সংযুক্ত আরব আমিরাতের এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (ইনক), চীনের পেট্রো চায়না (সিঙ্গাপুর) পিটিই লিমিটেড ও ইউনিপেক (সিঙ্গাপুর) পিটিই লিমিটেড, ইন্দোনেশিয়ার পিটি বুমি সিয়াক পুসাকু (বিএসপি), থাইল্যান্ডের পিটিটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং পিটিই লিমিটেড ও ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে। এর বাইরে উম্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমেও জ্বালানি তেল কেনে বিপিসি।
অপরদিকে আরও প্রায় ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে বিপিসি, যা সৌদি আরবের সৌদি অ্যারাবিয়ান অয়েল কোম্পানি (সৌদি আরামকো) ও আরব আমিরাতের আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (অ্যাডনক) থেকে কেনা হয়।
বিপিসি ও অর্থবিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে জ্বালানি তেল আমদানিতে প্রতি মাসে ১৬ থেকে ১৭টি আমদানি ঋণপত্র খুলতে হয়। এতে এখন মাসে ৭৩ থেকে ৭৫ কোটি ডলারের ঋণপত্র খোলা দরকার হয়। এসব ঋণপত্রগুলো সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকে খোলা হয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারের ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়ে ব্যাংকগুলো চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে প্রায়ই অপারগতা প্রকাশ করে। এর জন্য একাধিকবার মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা হয়।
এ বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দেশের স্বার্থে ১৩৭ টাকায় কেনা ডিজেল দেশে ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর দেশের অর্থনীতি সম্প্রসারণশীল হওয়ায় দেশে ডিজেলের চাহিদা আগের চেয়েও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে চাহিদা থাকায় আমাদের ডিজেল আমদানি ও সরবরাহ বাড়াতে হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য জ্বালানি তেলের চাহিদা ও সরবরাহ বাড়ছে। তবে বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে জ্বালানি তেল আমদানির মূল্য পরিশোধে ডলার সংকটের কারণে বেগ পেতে হচ্ছে। আমরা মূল্য পরিশোধে ৩০ দিনের জায়গায় ৯০ দিন করার জন্য আলোচনা করছি। পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা থেকে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ঋণপ্রাপ্তি নিয়ে আলোচনা করছি। এতে সফল হলে ডলারের ওপর চাপ কমে আসবে।’