Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 5:22 am

দেশের উত্তরাঞ্চলে এখনও মৌসুমি দারিদ্র্য বিদ্যমান

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে মঙ্গা (মৌসুমি দারিদ্র্য) রয়েছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় এমন দারিদ্র্য এখনও বিদ্যমান। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এমন দারিদ্র্যের শিকার হন ভূমিহীন ও অতিদরিদ্র মানুষেরা। তবে আগের তুলনায় এ হার এখন কমে এসেছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) পাবলিক লেকচারে এসব বিষয় উঠে এসেছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সংস্থাটির সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত পাবলিক লেকচারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইয়েল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আহমেদ মুশফিক মোবারক। সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।

‘ইনোভেশন টু অ্যাড্রেস সিজনাল পভার্টি’ শীর্ষক লেচারে ড. মুশফিক বলেন, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার ওপর একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। সেখানে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এ মৌসুমি দারিদ্র্য বিরাজ করে। গবেষণায় অংশ নেয়া মানুষের মধ্যে ২৫ শতাংশ বলেছেন, এ সময় তারা ঠিকমতো খেতে পারেন না। অথবা তিন বেলা খেতে পেলেও তার পরিমাণ কম থাকে। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবারও খেতে পান না। ফলে অনেক সময় পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। এসব মানুষ বছরের নির্দিষ্ট এ সময়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায়ও ভোগে। তবে সেই অবস্থা শুধু বাংলাদেশেই নয়, একই চিত্র ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, গাম্বিয়াসহ আরও অনেক দেশের।

অধ্যাপক আহমেদ মুশফিক মোবারক আরও বলেন, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় ২০০৭ সালে যেমন মৌসুমি দারিদ্র্য ছিল, ২০১৬ এমনকি ২০২০ সালেও একই রকম আছে। তবে ভূমিহীনদের মধ্যে ৫০ শতাংশ বলেছেন, তারা অনেক সময়ই ঠিকমতো খেতে পারেন না। তিনি আরও বলেন, আগস্ট মাসে গ্রামে সাধারণত ধান রোপণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়, ফলে মানুষের হাতে কাজ থাকে। কিন্তু সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ধান বড় হওয়ার সময়টাতে খুব বেশি কাজ থাকে না। তখন শ্রমিকের চাহিদা কম থাকায় মজুরিও কমে যায়। আবার ডিসেম্বর মাসে যখন ধান কাটা শুরু হয়, তখন কাজ পায় সাধারণ শ্রমিকরা। মৌসুমি দারিদ্র্য এখনও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ অবস্বা থেকে উত্তরণে স্থানান্তরের বিকল্প নেই। অর্থাৎ দেশের যে এলাকায় উল্লিখিত তিন মাস কাজ থাকবে, সেসব এলাকায় যাবে যেখানে কাজ নেই সেখানকার মানুষ। তবে এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। অর্থাৎ এখানে ভোগ্য ঋণ (বিশেষ ধরনের ঋণ কার্যক্রম) পরিচালনা করতে হবে। যেসব মানুষ বাইরে কাজের জন্য যেতে চায়, তাদের বাসের টিকিট ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য ঋণ দিতে হবে। শর্ত থাকবে, তারা যখন বাড়িতে ফিরে আসবে, তখন সেটি পরিশোধ করবে। এখানে সাধারণ ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা কার্যকর হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের কিছু মানুষকে যখন কাজ ছিল না তখন টাকা দিয়েছি, যাতে তারা বাসের টিকিট কেটে অন্য এলাকায় গিয়ে কাজ করতে পারেন। তখন দেখা গেছে, তারা ফিরে এসে সেই ঋণ পরিশোধ করেছেন। আবার দেখা গেছে, তারা যেখানে কাজ করতে গেছেন, সেখানে স্থায়ীভাবে থাকতেও চান না। ফিরে এসে পরে আর টাকা নেননি। অর্থাৎ তাদের টাকার প্রয়োজন ছিল না। এ ধরনের কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন এই সমস্যার সমাধান একেক দেশে একেক রকম। যেমন নেপালে যেভাবে সমাধান করা যাবে, বাংলাদেশে সেই মডেল কাজে নাও লাগতে পারে। এজন্য বাংলাদেশের জন্য নিজস্ব মডেল দাঁড় করাতে হবে।

ড. বিনায়ক সেন বলেন, মৌসুমি দারিদ্র্য নিরসনে স্থানান্তর প্রক্রিয়া গ্রাম থেকে গ্রামে হতে পারে। অর্থাৎ এক গ্রামে কাজ না থাকলে মানুষ আরেক গ্রামে যেতে পারে। আবার শহর থেকে শহরে, কিংবা গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর হতে পারে। অতিদরিদ্র, ভূমিহীন ও দাদন ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণগ্রস্ত মানুষরাই সাধারণত স্থানান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় সরকার যদি প্রণোদনা দেয়, তাহলে অনেক ভালো ফল বয়ে আনতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, এই গবেষণায়  কুড়িগ্রাম ও লালমনিহাট জেলায় মৌসুমি দারিদ্র্যের কথা বলা হলেও দেশের অন্যান্য এলাকায় এ রকম চিত্র আছে। তবে বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারলে এক্ষেত্রে সুফল আসতে পারে।