দেশের পুঁজিবাজার কীভাবে বিশ্বমানের হবে?

বর্তমানে আইপিও’র মাধ্যমে আসা বেশিরভাগ কোম্পানি ভালো মানের নয়। আবার প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের কারণে বাজার থেকে টাকা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। যার কারণে বাজারের এ রকম অবস্থা। অন্যদিকে নীতিনির্ধারকরা দাবি করছেন, দেশের পুঁজিবাজার বিশ্বমানের হবে। ২০০৯ বা ২০১০ সালে প্লেসমেন্টের মাধ্যমে এভাবে শেয়ার বিক্রি হয়নি। বর্তমানে এটি এক ধরনের বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা নেই। কারণ বাজার সঠিক নিয়মে চলছে না। বাজারে তারল্য সংকট কি প্রকৃতভাবে হচ্ছে নাকি কৃত্রিমভাবে সেটাই ভাবার বিষয়। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাইডাস ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডর সিইও মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিন এবং বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের অর্থনৈতিক প্রতিবেদক আবদুর রহিম হারমাছি।
মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিন বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারের যেসব সমস্যা রয়েছে তার বেশিরভাগই কৃত্রিমভাবে তৈরি। জনগণের কাছে পর্যাপ্ত টাকা রয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আস্থা নেই। কারণ বাজারে তেমন ভালো মানের কোম্পানি নেই। কীভাবে বাজারের প্রতি আস্থা তৈরি হবে বিনিয়োগকারীদের। তাই বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। বাজারসংশ্লিষ্ট এবং সরকার পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আন্তরিক নয়। কারণ সরকার পারে না এমন কিছু নেই।
আবদুর রহিম হারমাছি বলেন, দেশের অর্থনীতি দ্রুতগতি এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু পুঁজিবাজারের তেমন উন্নয়ন হচ্ছে না। দৈনিক টার্নওভার হচ্ছে মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা। এটি আসলে কাম্য নয়। নির্বাচনের পর জানুয়ারিতে বাজার ইতিবাচক থাকতে দেখা গেছে। দৈনিক টার্নওভার ১২০০ থেকে ১৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। কিন্তু মুদ্রানীতির ঘোষণার পর থেকেই বাজার আবার নি¤œগতির দিকে ধাবিত হয়। গত ১০ বছরে ব্যাংক খাতে পর্যালোচনা করলে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলো সঠিক সময়ে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে না। বর্তমানে বাজারে ৩০টি ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ফ্রেরুয়ারির শেষদিকে প্রতিটি ব্যাংকের ডিভিডেন্ড ঘোষণা করার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাংকের ঘোষণা আসেনি। যেসব বিনিয়োগকারী ব্যাংক খাতে বিনিয়োগ রয়েছে, তারা অপেক্ষায় রয়েছে ব্যাংকগুলো কি পরিমাণ লভ্যাংশ দেবে তার জন্য। জানা গেছে, ১২টি ব্যাংকের এডি রেশিও সমন্বয়ের জন্য সময়সীমা বাড়ানো হবে না। কিন্তু হঠাৎ করেই এডি রেশিও সমন্বয়ের জন্য ছয় মাস সময় বাড়ানো হলো। কিন্তু এর ইতিবাচক ফলাফল দেখা যায়নি। বরং ব্যাংকগুলোর টার্নওভার আরও কমেছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আইপিও’র মাধ্যমে যেসব কোম্পানি বাজারে আসছে তাদের বেশিরভাগই ভালো মানের কোম্পানি নয়। আবার প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের কারণে বাজার থেকে টাকা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। যার কারণে বাজারের এ রকম অবস্থা। কিন্তু অন্যদিকে নীতিনির্ধারকরা দাবি করছে, দেশের পুঁজিবাজার বিশ্বমানের হবে। ২০০৯ বা ২০১০ সালে প্লেসমেন্টের মাধ্যমে এভাবে শেয়ার বিক্রি হয়নি। বর্তমানে এটি এক ধরনের বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। কথা হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা কার প্রতি আস্থা রাখবে। বিএসইসি, ডিএসই এবং সরকার কারও প্রতি বিনিয়োগকারীর আস্থা নেই। কারণ বাজার সঠিক নিয়মে চলছে না। যদি বাজার এ রকম অবস্থা হয় তাহলে কীভাবে পুঁজিবাজার বিশ্বমানের হবে? আবার দৈনিক টার্নওভার ৪০০ কোটি টাকা হওয়ার বেশকিছু কারণ রয়েছে। বিশেষ করে গত জানুয়ারি মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ছয় হাজার ১০০ কোটি টাকার। গত জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩১ হাজার কোটি টাকার। ২০১৮ ও ২০১৯ সালের বাজেটে মোট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। সেখানে সাত মাসেই ৩১ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করা হয়েছে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি বিক্রি হয়েছে। তাহলে এ টাকা কোথায় যাচ্ছে? আসলে বাজারে তারল্য সংকট কি প্রকৃতভাবে হচ্ছে না কৃত্রিমভাবে সেটাই ভাবার বিষয়।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০