চট্টগ্রামে দেশের প্রথম অ্যানাটমি জাদুঘরে

এ যেন এক কঙ্কালের রাজ্য। চারদিকে সারি সারি বিভিন্ন প্রাণীর কঙ্কাল। এক শিহরন জাগানিয়া পরিবেশ এই বুঝি কামড় দিয়ে বসল হাঁ-করা কুমির ও সাপের কঙ্কাল। অনেক উঁচুতে থাকা উট ও হাতির কঙ্কালের মাথা ছোঁয়াই দায়। জাদুঘরে চারদিকে বিভিন্ন ছোট-বড় প্রাণীর ট্যাকসিডার্মি দেখলেই মনে হয় জীবন্ত প্রাণী। বিচিত্র প্রাণিজগতের হাজারো প্রাণের উপস্থিত রয়েছে এই অ্যানাটমি জাদুঘরে। এখানে সব প্রজাতির গৃহপালিত প্রাণীর পাশাপাশি বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর কঙ্কাল, ট্যাকসিডার্মি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নামসহ পরিচিতি রয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র খুলশী এলাকায় অবস্থিত সুন্দর এক বিশাল ক্যাম্পাস নিয়ে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)। উচ্চশিক্ষা ও মান্নোনয়নের উপপ্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে অ্যানাটমি হিস্টোলজি মিউজিয়ামটি গড়ে তোলা হয়। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের অ্যানাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগের বাংলাদেশের প্রথম সুবিশাল অ্যানাটমি মিউজিয়াম এটি।
প্রাণিদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও তন্ত্রের অবস্থা, গঠনবৈশিষ্ট্য এবং কাজ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে শিক্ষাদান করাই এই জাদুঘরের অন্যতম উদ্দেশ্য।
শিক্ষাবিদদের জন্য নতুন নতুন গবেষণার ক্ষেত্র তৈরিতে এই মিউজিয়াম অন্যরকম ভূমিকা রাখছে। বিশাল পরিসরে প্রতিষ্ঠিত দেশের একমাত্র অ্যানাটমি মিউজিয়ামটি নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিনোদনের পাশাপাশি প্রাণিজগৎ সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে।
মিউজিয়ামটিতে গৃহপালিত ও বন্যপ্রাণীর কঙ্কাল এবং মডেলের পাশাপাশি পশুপাখির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্টাফিং করে রাখা আছে। স্টাফিং করা মৃত প্রাণীর চামড়া ছাড়িয়ে ট্যানারির মতো বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে পরিষ্কার করে তুলা, রড ও জিআই তার দিয়ে প্রাণীর নিজস্ব অবয়ব বহাল রাখা হয়।
মধ্যযুগে জ্যোতিষী, ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী প্রস্তুতকারক এবং বিক্রেতারা বিভিন্ন প্রাণী স্টাফিং করে রাখত। এখানে দেশীয় পদ্ধতিতে কয়েকটি অঙ্গের প্লাস্টিনেশন করা হয়েছে। এখানে রয়েছে কঙ্কাল মানুষ, হাতি, উট, কুমির, অজগর, গরু, ছাগল, হরিণ, ঘোড়া, ভেড়া, বানর, শূকর, বিড়াল, কুকুর, বাদুড়, গিনিপিগ, খরগোশ, হাঁস, কচ্ছপ, মুরগি, কবুতর, কোয়েল প্রভৃতি।
স্টাফিং করা প্রাণী
রাজহংসী, হনুমান, ছাগল, বিড়াল, গুইসাপ, বানর, মোরগ, কবুতর, কাঠঠোকরা, দোয়েল, মাছরাঙা, খরগোশ, গিনিপিগ, টিকটিকিসহ গরু, ছাগল, শূকর ও খরগোশের ডিএনএ, ক্রোমোজোম, মস্তিষ্ক, চোখ, হƒৎপিণ্ড, জরায়ু, ফুসফুস, কিডনি, বক্ষসহ প্রভৃতি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মডেল সংরক্ষিত রয়েছে।
অ্যানাটমি মিউজিয়ামে আরও শোভা পাচ্ছে প্রাণিজগতের বিভিন্ন তন্ত্রচিত্র এবং প্রাণিবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞানসহ অ্যানাটমি বিষয়ে অবদান রাখা বিজ্ঞানীদের নাম ও প্রতিকৃতি। মিউজিয়ামে রয়েছে ৬০টি কঙ্কাল, ৩০টি স্টাফ, ফরমালিনে সংরক্ষিত বিভিন্ন প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিভিন্ন হাড় দুই হাজারটি এবং তিন হাজারটি বিভিন্ন ধরনের সøাইট।
পাহাড়তলী ফয়’স লেক ও চিড়িয়াখানা ঘুরতে যেতে চান? ফয়’স লেকের আগেই খুলশী এলাকায় রয়েছে সিভাসু। সিভাসুর মূল গেট থেকে একটু সামনে গেলে প্রশাসনিক ভবনের পাশে অ্যানাটমি জাদুঘর।
গেটে আনসার সদস্যরা জানিয়ে দেবেন অ্যানাটমি মিউজিয়াম বা জাদুঘর কোন দিকে। শুক্র ও শনিবারসহ সরকারি ছুটিতে বন্ধ থাকে সিভাসু।

প্রবেশের সময়
রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা
থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই জাদুঘর। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের জন্য অনেক কিছু শেখার আছে এই অ্যানাটমি জাদুঘরে।

কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার বিভিন্ন এসি ও ননএসি বাস আছে। গ্রিনলাইন, শ্যামলী পরিবহন, এস আলম, সৌদিয়া, এনা, ইউনিক, দেশসহ বিভিন্ন পরিবহরণ কোম্পানির বাসে আপনি চট্টগ্রাম আসতে পারবেন। আবার ট্রেন বা বিমানেও আসতে পারবেন চট্টগ্রামে।

খাবারদাবার
খুলশীতে অনেক ভালো খাবারের দোকান আছে। জিইসি মোড়ে এসে বা ফয়’স লেকে গিয়েও খেতে পারবেন।

পরামর্শ
আপনার মনে রাখতে হবে, সিভাসুতে অবস্থিত যে অ্যানাটমি জাদুঘরটি দেখতে যাচ্ছেন,
তার কিছু নিয়মকানুন আছে। একটু দেখেশুনে চলতে হবে। ছবি তুলতে পারবেন, তবে কাছে গিয়ে নয়, একটু দূর থেকে এবং খুব ছোট শিশুদের সঙ্গে না নেওয়াই ভালো। প্রাণীর কঙ্কাল বা স্টাফিং দেখে শিশুদের কেউ কেউ ভীতও হতে পারে।

শিপন আহমেদ

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০