দেশের পুঁজিবাজার একটি গুজবভিত্তিক বাজার। অপ্রমাণিত খবরগুলোকেই মূলত গুজব বলা হয় এবং যা লোকমুখে ছড়ায়। আর গুজবনির্ভরতা বা গুজব পৃথিবীর সব মার্কেটেই থাকে কিন্তু আমাদের দেশে হয়তো এর প্রভাব অনেক বেশি। গুজবের কারণে বাজারে যে ঘটনাগুলো ঘটে এবং এটির যখন সত্যতা প্রমাণ হয়, তখন সেটি আর গুজব থাকে না। সত্য ঘটনায় পরিণত হয়। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন পুঁজিবাজারের টেকনিক্যাল অ্যানালিস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ মহসীন ও আইসিএবির কাউন্সিল মেম্বার মো. শাহদাৎ হোসেন।
মুহাম্মদ মহসীন বলেন, দেশের পুঁজিবাজার একটি গুজবভিত্তিক বাজার। অপ্রমাণিত খবরগুলোকেই মূলত গুজব বলা হয় এবং যা লোকমুখে ছড়ায়। আর গুজবনির্ভরতা বা গুজব পৃথিবীর সব মার্কেটেই থাকে কিন্তু আমাদের দেশে হয়তো এর প্রভাব অনেক বেশি। গুজবের কারণে বাজারে যে ঘটনাগুলো ঘটে এবং এটির যখন সত্যতা প্রমাণ হয়, তখন সেটি আর গুজব থাকে না। সত্য ঘটনায় পরিণত হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কাদের থাকে এই গুজব সংগ্রহ করার ক্ষমতা? যাদের থাকে, তারা কোনো না কোনোভাবে ইনসাইডার। আর ইনসাইডাররা যখন উপকৃত হতে চান, তখন গুজবটি বাজারে ছড়ানোর আগেই তারা অবস্থান নেন। যখন অনেক মানুষকে গুজবে আকৃষ্ট করে টেনে আনা সম্ভব হয়, তখন সেখান থেকে তারা কেটে পড়েন এবং যখন এটি খবর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন দেখা যায় ওই গুজবভিত্তিক শেয়ারটির পতন হয়। যে কারণে বড় এনালিস্টরা বলেছেন, গুজবের সঙ্গে সঙ্গে তোমরা কেন শেয়ার বিক্রি কর। এ কথাটি বিখ্যাত পণ্ডিতদের। আর যারা জানেন, তারা এ পদ্ধতি অনুসরণ করেন এবং যারা জানেন না, তারা গুজবের সময় অপেক্ষা করেন খবরের সময় ক্রয় করে। কাজেই যারা দক্ষ বিনিয়োগকারী, তারা গুজবের সময় শেয়ার সংগ্রহ করেন এবং সুনিশ্চিত খবরে তারা সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েন।
মো. শাহদাৎ হোসেন বলেন, একটি শেয়ারের প্রকৃত মূল্য হচ্ছে তার নিট অ্যাসেট ভ্যালু যা তাই এবং সেটুকুই তার মূল্য হওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমান বাজারে প্রতিদিন শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে; ফলে এর মূল্য নির্ভর করে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। সরবরাহ কম কিন্তু চাহিদা বেড়ে গেলে শেয়ারটির মূল্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে যায়। উল্টো আবার চাহিদা কম এবং সরবরাহ বেড়ে গেলে একইভাবে শেয়ারদর পড়ে যায়। আর কোনো শেয়ারের চাহিদা তৈরি হওয়া উচিত কোম্পানির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের বিশ্লেষণের ওপর। তবে আমাদের এখানে স্বল্প মূলধনি অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ছে। আর স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর একটি সীমাবদ্ধতা থাকে। তারা পর্যাপ্ত বা প্রচুর পরিমাণে মার্কেট এক্সপানশন করতে পারে না এবং তাদের পরিমাণ কম থাকে। সে ক্ষেত্রে দেখা যায়, যদি চাহিদা বেশি থাকে, তখন স্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক পর্যায়ে শেয়ারদর উঠে যায়। আর এ ক্ষেত্রে অবশ্যই নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, যাতে পরবর্তীকালে এমন অবস্থা না হয়।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম