মাহমুদুল হক আনসারী: অর্থনীতির সব চাকা আজ সচল। উন্নয়নের ইতিবাচক পরিবর্তন দৃশ্যমান। সরকারের উন্নয়ন গতি কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে এক অবিশ্বাস্য গতিবেগে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। বাস্তবে জাতীয় সংসদে (২০১৯-২০) প্রস্তাবিত বাজেট এ অপ্রতিরোধ্য গতিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। আমাদের উন্নয়ন নিজেদেরই করতে হবে। মর্যাদাশীল ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে উন্নয়নের বিকল্প নেই। উন্নয়নকে বাধাবিহীন করতে হলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। পুঁজিবাজারের সংস্কার করতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ স্বল্প সময়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। সাফল্যের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হচ্ছে।
বাস্তবে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে চলেছে দেশ। দেশকে এগিয়ে নিতে বৈপ্লবিক যুদ্ধ এখনও অব্যাহত আছে। আর এ যুদ্ধ হলো কল্যাণ, মঙ্গল ও উন্নয়নের সোনার দেশ গঠনে। একটা চেষ্টা ও প্রচেষ্টায় ভালো-মন্দ সবসময় কিছু না কিছু থাকে। দেশ পরিচালনায় ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে কেউ থাকে না। আলোচনা-সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে ক্ষমতাসীনদের। সমালোচনার জন্য তিরস্কার করা যাবে না। সমালোচনা থেকে ভালো দিকগুলো দেশের উন্নয়নের জন্য গ্রহণ করতে হবে। তবেই রাষ্ট্র সুন্দর সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে যাবে। দেশকে এগিয়ে নিতে সব দল, গোষ্ঠী ও সমাজনেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। দেশের অব্যাহত উন্নয়ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অনেকেরই সহ্য হচ্ছে না। সহ্য না হলেও বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে এগিয়ে যাবে। কারও চোখরাঙানিতে এদেশের মানুষের কিছু আসে-যায় না। বাংলাদেশের মানুষ আজ উন্নয়নের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট। সারা পৃথিবী দেশের উন্নয়নে ভূয়সী প্রশংসা করছে। উন্নয়নের গতিধারা এভাবে চলা অব্যাহত থাকবে। তবে একটা বিষয় আমাদের সতর্ক হতে হবে, দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে কিছু ষড়যন্ত্র সবসময় ছিল, এখনও আছে। এসব ষড়যন্ত্রকে সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে হবে। দেশকে মজবুত কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখতে হলে কোটি কোটি শিক্ষিত ও বেকার মানুষের কর্মসংস্থান করতে হবে। তাদের চাকরির ব্যবস্থা করে স্বাবলম্বী করতে হবে। শিক্ষাকে আরও বেগবান করতে হবে। কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারিত করতে হবে। শিক্ষা সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রচুর পরিমাণ কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। দেশের মেধা পাচার বন্ধ করতে হবে। স্কুল-কলেজে নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষা ও শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িতদের দুর্নীতিমুক্ত ও আদর্শিক নৈপুণ্য দেখাতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা প্রতিরোধে জাতীয়ভাবে কাউন্সিল গঠন করে মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় সমস্যা মোকাবিলায় ক্ষমতাসীনদের এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা সমস্যা একটি জাতীয় সমস্যা। এ অঞ্চলের সব দেশের জন্য রোহিঙ্গা সমস্যা জটিল সমস্যা হিসেবে তৈরি হয়েছে। কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল সমস্যা জিইয়ে রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। মিয়ানমার সরকার কথা দিয়ে কথা রাখছে না বাংলাদেশের সঙ্গে। আন্তর্জাতিক সংস্থাকেও তারা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বারবার সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করছে। এখনও রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সৈন্যদের অমানবিক নির্যাতন বন্ধ হয়নি। মিয়ানমার সরকার কারও কথাই শুনছে না। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় দেশের আর্থসামাজিক পরিবেশ ও রাজনীতির জন্য বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। তাদের নির্দিষ্ট ক্যাম্পে ধরে রাখা কঠিন হয়ে উঠছে। ক্যাম্পগুলোতে নিত্যদিন সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংগঠিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা যুবকদের কতিপয় সংগঠন জঙ্গি হয়ে উঠছে। দেশি-বিদেশি কিছু এনজিও তাদের উচ্ছৃঙ্খল করতে সাহায্য করছে। সম্প্রতি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে রোহিঙ্গা নাগরিক আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। কোনো অবস্থায় তারা ক্যাম্পে থাকতে চাইছে না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানাভাবে তারা ঢুকে পড়ছে এবং দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। একশ্রেণির লোক তাদের দেশের নাগরিকত্বের কাগজপত্র ও পাসপোর্ট তৈরিতে সাহায্য করছে। তারা বাংলাদেশের জন্য ক্রমেই হুমকি হয়ে উঠছে। টেকনাফ ও কক্সবাজারে স্থানীয় জনগণের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গারা ঝগড়াঝাঁটিতে লিপ্ত হচ্ছে। যেকোনো মূল্যে তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশকে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের সহযোগিতায় এ সমস্যা সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশের মানচিত্র, নদী, সাগর ও সীমান্ত রক্ষায় কোনো অবস্থায় মতবিরোধ রাখা চলবে না। দেশের মানচিত্র রক্ষায় সব দল ও শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মানচিত্রের সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় বহির্বিশ্বের সব ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।
গবেষক, প্রাবন্ধিক
mh.hoqueansari@gmail.com