নিজস্ব প্রতিবেদক: সংখ্যার হিসাবে দেশে এখনও বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। অনেকে বাস করছে দারিদ্র্যসীমার সামান্য উপরে। এরা খুবই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
গতকাল প্রফেসর শফিকুর রহমান স্মারক বক্তৃতা-২০১৬ অনুষ্ঠানে ‘প্রোসপারিটি ফর অল, পোভার্টি ফর নান : অ্যা জার্নি টুওয়ার্ডস ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন’ বিষয়ের ওপর বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
আতিউর রহমান বলেন, বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে এবং অনেকে আছে যারা দারিদ্র্যসীমার সামান্য উপরে রয়েছে। এরা সবাই খুব ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাদের ঝুঁকিমুক্ত করতে আর্থসামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য আবার দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী ,বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। আর সাধারণভাবে দারিদ্র্যের হার ২৩ দশমিক দুই শতাংশে রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবদিক থেকে এগিয়ে গেলেও সামনে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাইলে প্রবৃদ্ধির হার হতে হবে আট শতাংশের বেশি। আর বিনিয়োগহার জিডিপির ৩৪ শতাংশ করতে হবে। এজন্য অবকাঠামো উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি কাজের গতিও বৃদ্ধি করতে হবে। ক্রমাগত নগরায়ন অবশ্যম্ভাবী। উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে হলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই নগরায়নের কোনো বিকল্প নেই। শক্ত করতে হবে রাজস্ব আহরণ, বাণিজ্যের বহুমুখীকরণ, আর্থিক খাত, ভূমিবাজার, ব্যবসা করার খরচ, জলবায়ু পরিবর্তন ও নগরায়ন সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণের জবাবদিহিতামূলক করতে পারলে উন্নয়ন আরও গুণমানের হবে। অর্থনৈতিক বৈষম্য, সুশাসন ও নাগরিকের প্রতি ন্যায়ভিত্তিক আচরণের যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেসব মোকাবিলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।
সরকারের ‘ভিশন-২০২১’ কথা উল্লেখ করে ড. আতিউর রহমান বলেন, জনগণের মৌলিক চাওয়াকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে সরকারের ভিশন-২০২১। ব্যক্তিখাতের প্রাধান্য, উদারকরণ ও বিনিয়োগবান্ধব নীতি সংস্কার, বড় বড় অবকাঠামো গড়ার উদ্যোগ, ব্যাপকভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা, দেশব্যাপী ডিজিটাল প্রসার ও মার্কেটের সঙ্গে অধিক হারে সংযুক্তির কৌশলের ওপর ভিত্তি করে এই দীর্ঘমেয়াদি কর্মকৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ ইতোমধ্যেই সুফল দিতে শুরু করেছে। অর্থনীতি ও উন্নয়নের সব সূচকেই বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। রফতানি, রেমিট্যান্স, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণসহ সব ক্ষেত্রেই দিন দিনই উন্নতি হচ্ছে। সরকারের বাজেটীয় উদ্যোগগুলোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সব ব্যাংকই অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নে কাজ করছে। ফলে কৃষি ও ক্ষুদে খাতে প্রচুর অর্থায়ন ঘটেছে। এর ফলে দেশি চাহিদা ও বাজার যেমন বেড়েছে, তেমনি সরবরাহও বেড়েছে। গত আট বছরে প্রবৃদ্ধি ছিল গড়ে প্রায় ছয় দশমিক তিন শতাংশ। অতিদারিদ্র্যের হার কমানোর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে। এই হার প্রায় ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা গেছে (২০০৫ সালে তা ছিল ২৫ শতাংশ)। স্বল্পোন্নত শ্রেণিভুক্ত দেশ হয়েও বাংলাদেশ মানব উন্নয়নে এই শ্রেণির ওপরে থাকা কেনিয়া, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, জিম্বাবুয়েকে পেছনে ফেলে মধ্যম মানব উন্নয়নের দেশ হিসেবে উন্নীত হয়েছে। গড় আয়ুর বিচারেও বাংলাদেশের অবস্থান ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভারত, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোর ওপরে। সার্বিক বিবেচনায় তাই বাংলাদেশকে ‘স্বল্পোন্নত’র কাতারে রাখলে তাতে কেবল উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশটির অর্জনগুলোকেই ছোট করা হবে এমন নয়, পাশাপাশি বিশ্বমঞ্চে এদেশের অনুসরণীয় উদ্যোগগুলো তুলে ধরার ক্ষেত্রেও তা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারপারসন ও প্রফেসর খন্দকার বজলুল হক এবং কনভেনর ড. সাব্বির আহমেদ।