সম্ভবত কভিড মহামারি থেকেই যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত মে মাসেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেÑ‘করোনাভাইরাস হয়তো কখনোই নির্মূল হবে না।’ পাঁচ মাস পরও ওই ধারণা সমভাবে প্রাসঙ্গিক। তাই প্রতিষেধক উৎপাদনের পাশাপাশি ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
ভাইরাসটি জাতিগত রোগ হিসেবে মানবজাতির সঙ্গে থেকে যেতে পারে। ‘এইচআইভি’ নির্মূল হয়নি, লুপ্ত হয়নি অনেক রোগÑহয়তো ভয়াবহতা কমেছে, প্রাণহানি কমেছে; কিন্তু থেকে গেছে। সব মহামারিকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে, মানসিকভাবে এর জন্য তৈরি হতে হবে। ভাইরাসের কাছে আত্মসমর্পণ নয়, প্রকৃতির কাছে নিজেকে সঁপে দেয়া নয়; প্রতিষেধক তৈরি করতে হবে। প্রথম সংক্রমণকালে কলেরা, টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, কলেরা-টাইফয়েড, জলাতঙ্ক, গুটিবসন্ত, টিটেনাস, ডিপথেরিয়া প্রভৃতিও কম ভীতিকর ছিল না। এসব রোগের টিকা উৎপাদন ও টিকাদান কর্মসূচিতে আমাদের অর্জন গর্ব করার মতো। সাফল্য ও স্বীকৃতিও আছে। এগুলো এক দিনে অর্জিত হয়নি। কভিডের প্রতিষেধক উৎপাদন খুব দ্রুত করা জরুরি। প্রাণহানির পাশাপাশি কভিডের অভিঘাতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন একপ্রকার থমকে আছে। এ অবস্থায় গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘পিছিয়ে যাচ্ছে সরকারিভাবে কভিড টিকা উৎপাদন’ শীর্ষক প্রতিবেদন আমাদের হতাশ করে।
গত জুনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ছয় মাসের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগসের মাধ্যমে দেশে কভিডের টিকা উৎপাদনের সুপারিশ করা হয়। এখন বলা হচ্ছে, এক বছরের মধ্যে বোতলজাত করার কথা। কমিটি এ কাজে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পরিহার করার জন্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ (আইপিএইচ) টিকা উৎপাদন করত। সর্বশেষ ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি জলাতঙ্ক রোগের টিকা উৎপাদন করেছিল। তারপর টিকা উৎপাদন করার কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এখন বিদেশ থেকে আনীত টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে (ইপিআই)।
১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত আইপিএইচের অন্তত এক হাজার গবেষক ও শিক্ষাবিদ আছেন। টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা তাদের ছিল। মহামারি কভিডের টিকা সংগ্রহ নিয়ে যেভাবে বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগিতা চলছে, তাতে দেশে টিকা উৎপাদনই বড় বিকল্প ছিল। অথচ এখনও আমরা পিছিয়ে। ওষুধশিল্পে আমাদের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। এখন বেশ কয়েকটি দেশে ওষুধ রপ্তানি করি আমরা। অথচ সাতটি টিকা তৈরির অভিজ্ঞতা থাকলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রতিষ্ঠান এখন কোনো টিকা তৈরি করে না।
১৯৭৮ সালে ইপিআই শুরু হলে ইউনিসেফের মাধ্যমে বাংলাদেশে টিকা আনা শুরু হয়। বাংলাদেশে ডিপিটির টিকা আসত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে। এ কারণে সেরামের সঙ্গে আইপিএইচের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেরামের বিশেষজ্ঞরা ২০০৭ সালে আইপিএইচকে আধুনিক কারখানা তৈরির পরামর্শ দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই পরামর্শ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হলে হয়তো কভিডের টিকা উৎপাদনে আমরাও এগিয়ে থাকতাম। কভিডে প্রাণহানি বেড়ে যাওয়ায় আমরা ভালোভাবেই বুঝতে পারছি, টিকা উৎপাদন করা গেলে কভিডের অভিঘাত আমাদের কাবু করতে পারত না। এখন যত দ্রুত সম্ভব টিকা উৎপাদনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে।