নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে ক্যানসারে আক্রান্তদের ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশই নারী। আক্রান্তদের ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ। এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
পুরুষরা মূত্রথলি, প্রোস্টেট ও মুখগহ্বর ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। নারীদের স্তন, জরায়ুমুখ ও মুখগহ্বর ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। শিশুরা লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা ও হাড়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের উদ্যোগে বছরব্যাপী প্যাথলজিভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি ও মাসব্যাপী হাসপাতালভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি নিয়ে এ গবেষণা করা হয়। গতকাল শহীদ ডা. মিল্টন হলে এক সেমিনারে এ গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়।
প্যাথলজিভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রিতে দেখা যায়, ডায়াগনোসিসের জন্য সংগৃহীত ২১ হাজার ১৭৫টি নমুনার মধ্যে ৩ হাজার ৫৮৯টি নমুনায় (১৭ শতাংশের) ক্যানসার চিহ্নিত হয়েছে। পুরুষদের (৪০ দশমিক ৫ শতাংশ) তুলনায় নারীদের (৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ) ক্যানসারের আধিক্য রয়েছে।
পূর্ণবয়স্ক পুরুষদের প্রধান ক্যানসারগুলো হলোÑমূত্রথলি (১০ দশমিক ২ শতাংশ), প্রোস্টেট (৯ দশমিক ৯ শতাংশ) ও মুখগহ্বর (৮ দশমিক ৫ শতাংশ)। আর নারীদের প্রধান ক্যানসার হলো, স্তন (২৩ দশমিক ৩ শতাংশ), জরায়ুমুখ (২১ দশমিক ৫ শতাংশ) ও মুখগহ্বর (৮ দশমিক ৯ শতাংশ)। প্রজননতন্ত্রের ক্যানসারে আক্রান্তের হার পুরুষের ১১ দশমিক ২ শতাংশ, নারীদের ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ। নির্ণয় করা ক্যানসারের মধ্যে স্কোয়ামাস সেল
কারসিনোমা (৩১ দশমিক ৮ শতাংশ) ও অ্যাডেনোকারসিনোমার (৩১ দশমিক ২ শতাংশ) হারই সর্বাধিক।
হাসপাতালভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি নিয়ে গবেষণার ফলে দেখা যায়, মোট রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৬৫৬ জন। তাদের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক এক হাজার ২৩৮ জন এবং শিশু ৪১৮ জন। এ ক্ষেত্রে পুরুষদের প্রধান ক্যানসার হলো ফুসফুস (৯ দশমিক ৬ শতাংশ), লিউকেমিয়া (৯ দশমিক ৪ শতাংশ) ও লিম্ফোমা (৯ শতাংশ)।
নারীদের স্তন (২৮ দশমিক ১ শতাংশ), থাইরয়েড (১৬ দশমিক ১ শতাংশ), জরায়ুমুখ (১২ দশমিক ২ শতাংশ)। ছেলে শিশুদের প্রধান ক্যানসার হলো লিউকেমিয়া (৭১ দশমিক ৫ শতাংশ), লিম্ফোমা (১০ দশমিক ৩)। মেয়ে শিশুদের প্রধান ক্যানসার হলো লিউকেমিয়া (৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ) ও হাড় (১১ দশমিক ৬ শতাংশ)।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। গবেষণার ফল নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান ও সিনিয়র রিসার্চ অফিসার ডা. শেহরিন ইমদাদ রায়না।
অতিথিরা তাদের উত্থাপিত প্রবন্ধে সারাদেশে ক্যানসারের সঠিক তথ্য পেতে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি চালু এবং ক্যানসার রেজিস্ট্রির কারিগরি দিক উন্নত করতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা নেয়ার কথা উল্লেখ করেন।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সমন্বিতভাবে ক্যানসার রেজিস্ট্রি কার্যক্রম বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। অন্য বক্তারা ক্যানসার মোকাবিলায় ও করণীয় বাস্তবায়নে সঠিক নেতৃত্বদান, চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা, ক্যানসারভিত্তিক ডেটা সংগ্রহের কার্যক্রম জোরদার ও প্রাপ্ত ডেটার বিস্তারিত বিশ্লেষণসহ গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ শরীফুল ইসলাম। প্যাথলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ কামালের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো জাহিদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এম মোস্তফা জামান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও হেলথ ইনফরমেশন ইউনিটের প্রধান ডা. শাহ আলী আকবর আশরাফি।