দেশে চালের মজুত পর্যাপ্ত কারসাজি না হলে বাড়বে না দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বাজারে চালের ঠিকঠাক সরবরাহ রয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল মজুতও রয়েছে। সে কারণে চাল রপ্তানিতে ভারত সরকার শুল্প আরোপ করলেও দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে দেশের ধান ও চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। গত শুক্রবার অভ্যন্তরীণ মজুত ধরে রাখা ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে চাল রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ভারত সরকার, যা অব্যাহত থাকবে আগামী ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত।

ভারত সরকারের এই নির্দেশনার পর গতকাল রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মোটা স্বর্ণা কিংবা পাইজম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে। মাঝারি মানের চাল (বিআর-২৮, বিআর ২৯ চাল) বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহ কিংবা ১৫ দিন আগেও একই দরে চাল বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের ঢাকা রাইস এজেন্সির মালিক মোহাম্মদ সায়েম বলেন, গত সপ্তাহ কিংবা দুই দিনে নতুন করে চালের দাম বাড়েনি। এখনও আগের দামেই চাল বিক্রি করছি। নাজিরশাইল চাল ৬৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, মিনিকেট চাল ৬২ থেকে ৬৬ টাকা এবং বিআর-২৮ নম্বর চাল বিক্রি করছি ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে। ভারত চালের রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের পরও আমাদের বাজারে দাম বাড়েনি।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী হাজী ইসমাইল অ্যান্ড রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের দেশ ভারতের চাল আমদানি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। আমরা আমাদের জায়গায় স্থির রয়েছি। এখন দেশের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা কোনো কারণে সংকট দেখা দিলে সমস্যা হতে পারে। তা না হলে যে আমদানি রয়েছে, তাতে আমাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়, মোটামুটি চলে যাবে। চিনিগুঁড়া চালের দাম বেড়েছে ১৫ দিন আগে। সরকারের চাল রপ্তানির ঘোষণার পর পোলাওয়ের চালের দাম বেড়েছে।

তিনি বলেন, আমরা মিনিকেট ৩২ থেকে তিন হাজার ৩০০ টাকা, বিআর-২৮ নম্বর চাল দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকা প্রতি বস্তা বিক্রি করছি। আর নাজিরশাইল চাল বিক্রি করছি ৬২ থেকে ৭৮ টাকা কেজিতে। পাইকারিতে গুটি স্বর্ণা, স্বর্ণা-৫ (পাইজম) চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। সেখান থেকে দু-এক টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

তিনি আরও বলেন, বাজারে চালের চাহিদা অনুযায়ী মিলাররা আমাদের সরবরাহ করছেন। এখন পর্যন্ত কোনো প্রভাব দেখছি না। কৃত্রিম কোনো সংকট তৈরি করলে বাজারে চালের সংকট হবে। এছাড়া চালের দাম বৃদ্ধির কোনো সুযোগ দেখছি না। এখন চাল যতটুকু মজুত রয়েছে, তা ভালোভাবে চলবে। এছাড়া সামনে অগ্রহায়ণ আসছে, তখন ধান পাব। অর্থাৎ ব্যাকআপ রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সংকট না থাকলে ভালো থাকব।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, আমাদের দেশে যে চাল রয়েছে তাতে ভারত থেকে আমদানির প্রয়োজন নেই। ভারতের চাল রপ্তানির সঙ্গে আমাদের দেশের চালের দাম বাড়া-কমার সম্পর্ক থাকার কথা নয়। কারণ আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল উৎপাদিত হয়েছে। কেউ যদি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ভারত থেকে চাল আমদানি করা হয়, তা অন্য কথা। কিন্তু এই মুহূর্তে চাল আমদানির মতো কোনো কারণ দেখছি না। পেঁয়াজের মতোই খুচরা ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা যদি কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন, তবে চালের দাম বাড়তে পারে। তবে ভারত শুল্ক আরোপের কারণে এই মুহূর্তে চালের দাম বাড়েনি।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, রপ্তানির উদ্দেশ্যে যেসব সেদ্ধ চাল এরই মধ্যে শুল্কায়নের জন্য কোনো ভারতীয় বন্দরে রয়েছে এবং রপ্তানির জন্য ২৫ আগস্টের আগে বৈধ ঋণপত্র খোলা হয়েছে, সেসব চাল নতুন আরোপিত শুল্কের আওতার বাইরে থাকবে। সর্বশেষ এ নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সব ধরনের সাদা চাল রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করল ভারত।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০