দেশে দক্ষ শ্রমিকের অভাব কবে ঘুচবে?

বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ হওয়ার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্রমশক্তি থাকলেও দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। জাতীয় উন্নয়ন বলতে সে দেশের সার্বিক উন্নয়নকে বুঝায়, যা ওই দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমেই সম্ভব। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকার প্রতিনিয়ত বিভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য, তবে সব ধরনের উন্নয়ন ব্যর্থ হবে যদি না সে দেশে দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলা না হয়। দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে দক্ষ  শ্রমিক নিয়োগ করতে হয়। যার ফলে বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক খাতগুলো ব্যয়কৃত অর্থ সেসব শ্রমিকদের অর্জন হিসেবে চলে যায় দেশের বাইরে।  ২০২৫ সাল নাগাদ ৯টি শিল্প খাতে ৮০ লাখ দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে বর্তমানে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি জনশক্তি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। এ বিপুল মানুষের মাধ্যমে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসার কথা, তা আসছে না। এর অন্যতম কারণ প্রবাসে বাংলাদেশি দক্ষ জনশক্তির অভাব। দেশে এসএসসি ও এইচএসসি পাসের পর উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার ঝোঁক বাড়ছে। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হলেও তাদের মধ্যে কোনো বিষয়ে দক্ষতা গড়ে উঠছে না। আর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছে, তার সঙ্গে শিল্প খাতের চাহিদার কোনো সামঞ্জস্য নেই। বাংলাদেশের কারিগরি প্রশিক্ষণের অভাবে সবসময়ই দক্ষ মানব সম্পদের অভাব রয়েছে। দেশের পোশাক খাতেই করোনা-পরবর্তী সময়ে ৩ লাখ দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন হবে কিন্তু এখনও গড়ে উঠেনি প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন পোশাক খাতে দক্ষ শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। করোনা মহামারির কারণে বিশ্বে শ্রম বাজারে আরও চাপ পড়েছে। দেশে শ্রম শক্তির কোনো ঘাটতি না থাকলেও রয়েছে দক্ষ শ্রমিকের অভাব। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বেকার তৈরির কারখানা হিসেবে গড়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীরা অনার্স-মাস্টার্স পাস করে বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছে। চাকরিও পাচ্ছে না আবার দক্ষতার অভাবে কারখানার শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে ভালো করতে পারছে না।

দেশের প্রধান শিল্প খাতগুলোয় দক্ষ জনবলের সংকট তীব্র হচ্ছে। বর্তমানে ২০ শতাংশ দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি নিয়েই চলছে দেশের রপ্তানি আয়ের তৈরি পোশাক খাত। এ সুযোগে কয়েক হাজার বিদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণ করতে হবে। বিভিন্ন শিল্পের কর্মীদের তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে পারদর্শী করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের মানুষকে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তোলা যায়; এরূপ পরিস্থিতিতেই সরকারকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবেÑএতে করে দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও দেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে এবং দেশ উন্নতির শিখরে আরোহণ করতে পারবে।

সাহদা আক্তার

শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ

ফেনী সরকারি কলেজ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০