নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সরকারের দুর্নীতির তদন্তের দাবি জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল দুপুরে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল দুদকে চিঠি নিয়ে যান। চিঠিতে ‘উপদেষ্টা ও মন্ত্রীর টেলিফোন কনভারসেশনের বিষয়বস্তু’ ও ‘ফরিদপুরে ২ হাজার কোটি টাকার পাচারের বিষয়ে’ তদন্ত করার দাবি জানানো হয়।
তার আগে গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দেশে দুর্নীতির একটা মহোৎসব চলছে। সরকার এক উপদেষ্টা (সালমান এফ রহমান) ও আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) টেলিফোন কনভারসেশন যেটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, সেই কনভারসেশনে যে বিষয়গুলো ছিল সেটা আমরা জানতে চেয়েছিলাম, এর তদন্ত হয়েছে কি না তাও জানতে চেয়েছিলাম। ফরিদপুরের অত্যন্ত সেনসিটিভ একটি পরিবার, সেই পরিবারের এক সদস্যের বিরুদ্ধে ২ হাজার কোটি টাকা অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়গুলো ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। আর কোনো কথাই হচ্ছে না এগুলো নিয়ে। আমরা দলের সর্বোচ্চ ফোরামে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা দুর্নীতির এই বিষয়গুলো নিয়ে আপাতত দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দেব। সেই চিঠিতে তাদের আমরা তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করব। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রত্যেকটা ইস্যু যেটা আসছে সেটা আমরা জাতির কাছে তুলে ধরব এবং একই সঙ্গে দুদকে পাঠাব।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আশা করব দুদকের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে ও আমরা দুর্নীতির যে বিষয়গুলো দিচ্ছি সেগুলোর ওপরে সুষ্ঠু তদন্ত করে তা জাতির সামনে তুলে ধরবে তারা এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’
দুদক অত্যন্ত সেনসিটিভ ইস্যুগুলো নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা লক্ষ করেছেন যে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটু যারা কাজ করতে চান, তাদের স্টাফ অর্থাৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের বিরুদ্ধে দুদকই ব্যবস্থা নেয়। কিছুদিন আগে দেখেছেন, একজন কর্মকর্তা শরীফকে বদলি ও পদাবনতি করা হয়েছে একটি বিশেষ দুর্নীতির মামলার তদন্ত করার কারণে। আজকের পত্রিকায় আছে, দুর্নীতি দমন কমিশন নিজেরা তদন্ত করে যে রিপোর্ট পাচ্ছে সেগুলো তারা আমলে নিচ্ছে না। সেগুলোকে তারা ধামাচাপা দিয়ে রাখার ব্যবস্থা করছে।’
দুদকে বেশিরভাগ সরকারি আমলাকে নিয়োগ দেয়া হয় উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সাবেক আমলাদের নিয়োগ দেয়া হয় তারা অত্যন্ত সচেতনভাবে চেষ্টা করেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ে যারা আছেন তারা অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা যারা আছেন তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত যাতে না হয় এবং দুর্নীতির তদন্তের মধ্যে তারা যেন না আসেন।’
বাংলাদেশের যে সম্ভাবনাটা তৈরি হয়েছে সেটাকে ধ্বংস করে ফেলার জন্য দুর্নীতি সবচেয়ে বড় ব্যাধি মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা এখন ক্যানসার আকারে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কোথাও পাবেন না যে ঘুষ দেয়া ছাড়া কোনো কাজ হচ্ছে। আইন-আদালতে বিচার পাবেন না। সবচেয়ে খারাপ অবস্থাটা হচ্ছে আদালতে, সেখানে সব হুকুমে কাজ হয়, সেখানেও কোনো কাজ হয় না দুর্নীতি ছাড়া। এর কারণটা হচ্ছে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে।’
দুপুর দেড়টায় দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনের কাছে এ অভিযোগ জমা দেয়া হয়। এ সময় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু উপস্থিত ছিলেন।
পরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএনপি নেতারা। এ সময় মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জানান, আমরা সুনির্দিষ্ট দুটি বিষয় নিয়ে এখানে এসেছি। অতি সম্প্রতি জাতি জানতে পেরেছে, আইনমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কথোপকথন ফাঁস হয়েছে। এ কথোপকথন অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সর্বোচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত। সেই বিষয়টি তদন্ত করতে আমরা বলেছি। আমরা বলেছি, এ বিষয়ে শক্তিশালী তদন্ত করুন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা করব। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের প্রতি আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। কথোপকথন সংক্রান্ত বিভিন্ন দলিল কমিশনের কাছে দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটি পেনড্রাইভ ও কিছু কাগজপত্র জমা দিয়েছি।
দ্বিতীয় অভিযোগ বিষয়ে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘ফরিদপুরের মোহতাশেম বাবরের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীকালে কী হলো, কী কারণে থেমে গেছে বা সেই জায়গায় কী কাজ হচ্ছে, এসব নিয়ে মানুষ জানতে আগ্রহী। এ বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য আমরা বলেছি।’
দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, উনারা কয়েকজন (বিএনপি নেতা) এখানে একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। যে কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করতে পারেন। এটা রেজিস্টারে রিসিভ করা হয়েছে। দুদক আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম নেয়া হবে।
বিএনপির অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে গেছেন, তাতে কী লেখা আছে তা খুলে দেখিনি।
জানা গেছে বিএনপির লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের অনুমোদন করা একটি প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের একটি কথোপকথনের অডিও অনলাইনে ফাঁস হয়েছে। এ কথোপকথনের মাধ্যমে সরকার এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতা অপব্যবহার করে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করা হয়েছে।’
তাদের এ কথোপকথন দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা সংশ্লিষ্ট অপরাধ উল্লেখ করে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনতে দুদকের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।
এছাড়া খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই খন্দকার মোহতাশেম বাবর দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে অভিযোগ করে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।