Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 6:54 pm

দেশে দেশে কোক-পেপসি বয়কটের ডাক

শেয়ার বিজ ডেস্ক: মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোয় বর্তমানে বয়কটের সম্মুখীন কোমল পানীয় দুই কোম্পানি কোক ও পেপসিকো। গাজা যুদ্ধের কারণে স্থানীয় কোমল পানীয়গুলোর কাছে ব্যবসা হারাচ্ছে এই দুই কোম্পানি। খবর: রয়টার্স।

মিসর, পাকিস্তানসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোয় চরম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠান দুইটি। মিসরে চলতি বছর তাদের লোকাল কোমল পানীয় ব্র্যান্ড ভিসেভেন মধ্যপ্রাচ্য এবং আরও কিছু অঞ্চলে গত বছরের তুলনায় তিনগুণ বেশি ব্যবসা করেছে। যেখানে ব্যবসা কমে গেছে কোকাকোলার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান কোক ও পেপসি ইসরায়েল ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। দাবি করা হয়ে থাকে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় যে ব্যয় হচ্ছে, তার একটা অংশ বহন করছে কোকাকোলা। অবশ্য প্রতিষ্ঠানটি এই দাবি অস্বীকার করে আসছে। পেপসিকো বলেছে, আমাদের ব্র্যান্ডগুলোর কোনোটিই সংঘাতে সরকার বা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত নয়। আর কোকা-কোলার ভ্যাষ্য হলো, তারা ইসরায়েল বা কোনো দেশে সামরিক অভিযানে অর্থায়ন করে না।

পেপসিকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) র‌্যামন লাগুয়ার্তা বলেছেন, কিছু ভোক্তা রাজনৈতিক ধারণার কারণে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে বিকল্প সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। লেবানন, পাকিস্তান এবং মিসরের মতো দেশে এর প্রভাব পড়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা এ ব্যাপারটা ঠিক করে ফেলব। এদিকে ইসরায়েল এই দুই কোমল পানীয়ের প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন করছে কি না এমন সমালোচনার মধ্যেই বাংলাদেশে একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করে ক্ষোভের মুখে পরে কোক। এর প্রভাব পড়ে বাজারেও। যার কারণে বিজ্ঞাপনটি তুলে নিতে বাধ্য হয় প্রতিষ্ঠানটি।

কোকাকোলা এইচবিসি–এর তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ জুন শেষ হওয়া ছয় মাসের হিসাবে মিসরে কোকের বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। অথচ গত বছরের এই সময়ের হিসাবে বিক্রি বেড়েছিল। অন্যদিকে, পাকিস্তানে-ও কোম্পানি দুইটির একই অবস্থা। বিয়ের বাড়ি থেকে শুরু করে সব অনুষ্ঠানে ব্যবহার হচ্ছে দেশীয় কোমল পানীয়। পাকিস্তানের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সানবল হাসান গত এপ্রিলে করাচিতে তার বিয়ের অনুষ্ঠানের খাবারের মেন্যু থেকে কোক ও পেপসি বাতিল করে দেন। তিনি জানান, তিনি অনুভব করতে চান না যে, তার অর্থ ইসরায়েলের কট্টর মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কর খাতে পৌঁছেছে। হাসান বলেন, বয়কটের মাধ্যমে, কেউ সেই তহবিলে অবদান না রেখে ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি জানান, তার বিয়ের অতিথিদের কোক ও পেপসির বদলে পাকিস্তানি ব্র্যান্ড কোলা নেক্সট পরিবেশন করেছিলেন।
পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় ডেলিভারি অ্যাপ ক্রেভ মার্টের প্রতিষ্ঠাতা কাসিম শ্রফ জানান, দেশটিতে কোলা নেক্সট এবং পাকোলার মতো স্থানীয় কোমল পানীয়র বিক্রি ১২ শতাংশের মতো বেড়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে গত বছরের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পেপসির ব্যবসায়ও ধস নেমেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

সব মিলিয়ে কোক ও পেপসি কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে তার হিসাব করা কঠিন বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা। কেননা, এখনও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে বেশ ভালো ব্যবসা করছে এই দুই প্রতিষ্ঠান। তবে মার্কেট রিসার্চার নিলসেন আইকিউ বলেছে, ওই অঞ্চলে সার্বিকভাবে পশ্চিমা পানীয় ব্র্যান্ডগুলোর ব্যবসা বছরের প্রথমার্ধে ৭ শতাংশ কমেছে। রয়টার্স জানায়, গাজায় হামলার পরের ছয় মাসে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ায় পেপসির বিক্রি তেমন একটা বাড়েনি। ২৮ জুন শেষ হওয়া ছয় মাসের হিসাবে মিসরে কোকের বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

অথচ পাকিস্তান, মিসরের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোয় নিজেদের পানীয়ের চাহিদা তৈরি করতে গেল কয়েক দশক ধরে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে কোক ও পেপসি।
উল্লেখ্য, ভোক্তাদের পণ্য বয়কটের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, এই প্রতিবাদ এসেছে ১৮ শতকের ব্রিটেনে দাসপ্রথা বিরোধী প্রতিবাদের সময় থেকে। ২০ শতকে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যও ব্যবহার করা হয়েছিল বয়কটের আন্দোলন। এবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এই বয়কটের আন্দোলন।