সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম: দেশে প্রথমবারের মতো পরিবেশবান্ধব লো-সালফারযুক্ত জ্বালানি তেল আমদানি করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। প্রথমে ১৫ হাজার মেট্রিক টন ০.৫ শতাংশ মাত্রার সালফারসমৃদ্ধ ফার্নেসবাহী অয়েল ট্যাংকার টিএমএন প্রাইড চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। আজ চট্টগ্রাম বন্দরের মেঘনা জেটিতে তেলের প্রথম চালানটির বার্থিং সূচি রয়েছে। এরপর প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে বন্দরের সব সমুদ্রগামী জাহাজ বাংকারিং সুবিধা পাবে। এর ফলে দেশের সমুদ্রবন্দর আন্তর্জাতিকমানের বন্দরের মতো সমমানের জ্বালানি সুবিধা নিশ্চিত হবে।
জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) ০.৫ শতাংশ মাত্রার সালফারসমৃদ্ধ তেল ব্যবহারের জন্য ছয় বছর আগে সদস্য দেশগুলোর প্রতি নির্দেশনা দিয়েছিল; যা বিশ্বব্যাপী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালে জাহাজে জ্বালানি তেল সরবরাহে ‘বাংকারিং নীতিমালা’ প্রণয়ন করে; যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিপিসিকে। প্রায় ছয় বছর পর নীতিমালা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয় বিপিসি। এর অংশ হিসেবে ১৫ হাজার টন আমদানিকৃত তেল দেশে এসেছে। এর মধ্যে তেল বিপণন, বিক্রয় ও মজুদ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করেছে বিপিসি।
এছাড়া প্রথম দফা আমদানির পর দ্বিতীয় দফায় ছয় মাসের জন্য সালফারসমৃদ্ধ তেল সরবরাহের জন্য প্রায় ১২ লাখ টন তেল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকারি সংস্থা বিপিসি। এর মধ্যে ৯ লাখ ৩০ হাজার থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার টন গ্যাসলিন, এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন জেট অয়েল, ২০ হাজার টন ফানের্স অয়েল, ৪৫ হাজার টন মোগ্যাস-৯৫ রোন এবং ৮০ হাজার টন মেরিন অয়েল রয়েছে। এর জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে বিপিসি। আগামীকাল দরপত্র বিক্রি ও সংগ্রহের শেষ দিন। আর পরশু খোলা হবে। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হলে আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে দেশি ও বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে তেল সরবরাহ করা হবে।
বিপিসি’র বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সমুদ্র দূষণরোধে আইএমও কম সালফারযুক্ত জ্বালানি ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়। এটি বাস্তবায়নে দেশে প্রথমবারের মতো লো-সালফারযুক্ত আমদানিকৃত ফার্নেস অয়েল বহনকারী অয়েল ট্যাংকার টিএমএন প্রাইড বন্দরের আজ মেঘনা জেটিতে বার্থ নেওয়ার সূচি রয়েছে। এতে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে চলতি সপ্তাহ থেকে সমুদ্রগামী দেশি-বিদেশি জাহাজে তেল সরবরাহ শুরু হবে।
কর্মকর্তারা জানান, প্রথম দুই মাসে আমাদের ১০ হাজার টন তেল বিক্রয় হতে পারে। এরপর আস্তে আস্তে বিক্রয় বুঝে বাড়ানো ও কমানো হবে। আর মূল্য আন্তর্জাতিক মূল্যেও কাছাকাছি থাকবে। তবে পেমেন্ট হবে ডলারে। বাংকার সাপ্লাইয়ারের ৯টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়।
এ বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান সামছুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লো-সালফারযুক্ত জ্বালানি তেল আমদানি হচ্ছে। আজ-কালের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের তেলবাহী জাহাজ আসবে। আর এ তেল সমুদ্রগামী জাহাজগুলোতে সরবরাহের জন্য ৯টি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, প্রথমদিকে মাসে ২০ হাজার টন জ্বালানির চাহিদা থাকতে পারে। পরে ৫০ হাজার টন চাহিদা হতে পারে। সবমিলিয়ে এ খাতে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ চ্যালেঞ্জের। কারণ আমাদের আশপাশে অনেক পোর্ট আছে। এসব পোর্টের চেয়ে বেশি দাম রাখা যাবে না। আমরা আমদানিমূল্যের সঙ্গে অপারেশনাল চার্জ যুক্ত করে দাম নির্ধারণ করব।
উল্লেখ, বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের সমুদ্রগামী জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছিল তিন হাজার ৭৯৪টি; যা আগের অর্থবছরের ছিল তিন হাজার ৬৯৯টি। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তিন ৬৬৪ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তিন হাজার ৯২টি।