Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:52 am

দেশে বিদেশি ৮৬ হাজার কর্মী কাজ করলেও ট্যাক্স দেন মাত্র ১৪ হাজার

গত বছর অনেক জায়গায় ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চলতি বছরে তা দেখছি না। এছাড়াও আমরা ট্যাক্স দিই কিন্তু দেশে বিদেশি প্রায় ৮৬ হাজারের মতো কর্মী কাজ করেন, যদিও এর চেয়ে বেশি আছে। এর মধ্যে মাত্র ১৪ হাজার কর্মী ট্যাক্স দেন, বাকিরা দেন না। এরকম বিশ্বের কোথাও নেই বলে মনে হয়। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচে অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ উল হাসান খসরু ও আমার স্টক ডটকমের সিইও মুহাম্মদ আলী জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, জিডিপি গ্রোথ গত বছর যেখানে সাত দশমিক ৮৬ শতাংশ ছিল, চলতি অর্থবছরে তা সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গ্রোথ লেভেলও কমে যাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। সামনে নির্বাচন ও মানি মার্কেটের অস্থিরতাÑএটিও জিডিপি কমার একটি কারণ। দেশে অনেক ভালো মানের কোম্পানি রয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং কীভাবে তাদের পুঁজিবাজারে আনা যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। সেগুলো পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হলে বাজারের গভীরতা বাড়বে। বর্তমানে পুঁজিবাজার তেমন একটা ভালো অবস্থানে নেই। আর বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী গুজবনির্ভর বিনিয়োগ করেন। বুঝে-শুনে বিনিয়োগের কারণ সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই তাদের।
মাহমুদ উল হাসান খসরু বলেন, একটি পুঁজিবাজারের টার্নওভার বাজারের গভীরতা যাচাইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোন শেয়ারের দাম বাড়ে বা কমে, সেটা যাচাইয়ের চেয়ে টার্নওভারের গভীরতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বাজারে যেভাবে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে সবারই প্রশ্ন হচ্ছে বিশ্বাস। কোনো শেয়ারের দামই ধারাবাহিকভাবে একই অবস্থানে থাকে না। অর্থাৎ শেয়ারের দাম অত্যন্ত বেশি ওঠানামা করছে।
এ অবস্থায় সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য বিনিয়োগের বিষয়টি বিপজ্জনক মনে করি। বাজারে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি দিকই থাকে। প্রতিদিনই উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যায়। তাহলে মার্জিনাল বিনিয়োগকারীরা কীভাবে বুঝবেন কোন সময় কোন পয়েন্টে শেয়ারটি কিনবেন। এখানেই ভাবার বিষয়। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজনীতির বিষয়গুলো গভীরভাবে জড়িত। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২০ শতাংশ কমে গেছে। রাজস্ব আদায়ের অনেকগুলো মাধ্যমের বেশিরভাগই মুখ থুবড়ে পড়েছে। যেমন অনলাইনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের উদ্যোগটি দৃশ্যমান দেখছি না। গত বছর অনেক জায়গায় ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চলতি বছরে তা দেখছি না। এছাড়াও আমরা ট্যাক্স দিই কিন্তু দেশে বিদেশি প্রায় ৮৬ হাজারের মতো কর্মী কাজ করেন, যদিও এর চেয়ে বেশি আছে। এর মধ্যে মাত্র ১৪ হাজার কর্মী ট্যাক্স দেন, বাকিরা দেন না। এরকম বিশ্বের কোথাও নেই বলে মনে হয়। কিছুদিন আগেও ট্যাক্স আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল; সেটিও এখন স্থবির হয়ে আছে। এতে আমরা হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছি। মানি লন্ডারিংসহ আরও বিভিন্ন অপরাধের বিষয় নিয়ে এনবিআর, দুদক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তেমন তৎপরতা দেখছি না। এর সঙ্গে রাজনীতি গভীরভাবে জড়িত।
অনুষ্ঠানে মুহাম্মদ আলী জাহাঙ্গীর বলেন, কদিন ধরে কিছু ভালো কোম্পানির শেয়ার বাড়ছে; কিন্তু সেভাবে টার্নওভার বাড়ছে না। এটিকে কৃত্রিম বলা যাবে না। কারণ বর্তমানে যে জায়গায় সূচকের অবস্থান, এখানে রাজনৈতিক কিছু বিষয় রয়েছে। যারা বড় বিনিয়োগকারী, সাধারণত নির্বাচনের আগে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা হয় সামনে নির্বাচন পরিস্থিতি কেমন হবেÑসেটা ভেবে। তখন সক্রিয় কোনো বিনিয়োগকারী বিনিয়োগে আসবেন না।
২০১০ সালের ধসের পর বা তার আগে যে পুঁজিবাজার নিয়ে কারসাজি হয়েছিল, ২০১০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত দেখবেন বেশিরভাগ কারসাজিকারীর তেমন কোনো দৃশ্যমান শাস্তি হয়নি। তাদের কাছ থেকে যে পরিমাণ প্রত্যাশা ছিল, সে হিসেবে তারা কিছুই করেনি।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ