২০২০-২১ অর্থবছর

দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে

ইসমাইল আলী: ২০০৯ সালের পর থেকে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে উৎপাদনের পরিমাণও। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় নিয়মিতই ওঠানামা করছে। কোনো বছর দাম কিছুটা কমানো গেলেও পরে হঠাৎ তা বেড়ে যাচ্ছে। এ রকম চিত্র দেখা গেছে গত অর্থবছর। এ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এর আমদানি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কয়েকটি দরপত্র বাতিল করা হয়। ফলে গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। এতে বিদ্যুৎ খাতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা যায়নি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, গত অর্থবছর জুনশেষে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ২২ হাজার ৩১ মেগাওয়াট। আর গত অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল সাত হাজার ৮৫২ কোটি ৪৭ লাখ কিলোওয়াটঘণ্টা। এ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ৫১ হাজার ৬৩৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় পড়ে ছয় টাকা ৫৮ পয়সা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বনি¤œ।

এর আগে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বোচ্চ ব্যয় ছিল ২০১৩-১৪ অর্থবছর। সে অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১০ হাজার ৫১৬ মেগাওয়াট। আর ওই অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল চার হাজার ২১ কোটি ৪২ লাখ কিলোওয়াটঘণ্টা। এতে সে বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় পড়ে ছয় টাকা ২৮ পয়সা। সে বছরও আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক বেড়ে যায়। এর প্রভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।

এর পরের (২০১৪-১৫) অর্থবছরের চিত্রও প্রায় একই ধরনের। সে অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৭৬৯ মেগাওয়াট। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় চার হাজার ৩৭৩ কোটি ৭৮ লাখ কিলোওয়াটঘণ্টা। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় সামান্য কমে দাঁড়ায় ছয় টাকা ২৭ পয়সা।

যদিও এর পরের কয়েক বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ক্রমশ কমে আসে। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়ায় ১২ হাজার ৩৩৩ মেগাওয়াট। সে সময় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ১৯ কোটি ৩৩ লাখ কিলোওয়াটঘণ্টা। আর সে অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় বেশ কিছুটা কমে দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ৫৫ পয়সা। এর পরের (২০১৬-১৭) অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় আর কমে দাঁড়ায় চার টাকা ৯০ পয়সা। সে বছর দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট। আর উৎপাদনের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৫৩৮ কোটি ৪৯ লাখ ইউনিট।

২০১৭-১৮ অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় আরও কিছুটা কমে দাঁড়ায় চার টাকা ৮৪ পয়সায়। সে বছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ১১৩ মেগাওয়াট। আর উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ছয় হাজার আট কোটি ৯৪ লাখ ইউনিট। যদিও পরের অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক বেড়ে যায়। সে (২০১৮-১৯) অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১৮ হাজার ৪৫৮ মেগাওয়াট। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ছয় হাজার ৮৫১ কোটি পাঁচ লাখ কিলোওয়াটঘণ্টা। সে সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ৯৫ পয়সা।

এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আবার সামান্য হ্রাস পায়। সে অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১৮ হাজার ৯৬৬ মেগাওয়াট। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৯৪১ কোটি ১৫ লাখ কিলোওয়াটঘণ্টা। সে অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় ছিল পাঁচ টাকা ৮৫ পয়সা। তবে গত অর্থবছর তা ইউনিটপ্রতি ৭৩ পয়সা বা প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ছয় টাকা ৫৭ পয়সায় পৌঁছায়। জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, গত অর্থবছর হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয় পেট্রোবাংলা। মূলত উচ্চ দামের কারণে এলএনজি আমদানি করতে না পারার প্রভাব পড়ে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির ওপর। এতে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বেশি চালাতে হয়। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামও নিয়মিত বাড়ছে। এর প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ে।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০