Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 6:10 pm

দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় রেকর্ড ৩৪.৬৫% বৃদ্ধি

ইসমাইল আলী: বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা নিয়মিতভাবে বাড়ছে, পাশাপাশি বাড়ছে উৎপাদনের পরিমাণ। তবে রেন্টাল-কুইক রেন্টালসহ বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগ তেলচালিত হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনও নিয়মিত বাড়ছে। যদিও গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় প্রতি বছরই ওঠানামা করছে। কোনো বছর দাম কিছুটা কমলেও আবার তা বেড়ে যাচ্ছে।

যদিও তিন বছর ধরে টানা বাড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় ব্যয়। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিকে এজন্য দায়ী করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছর জুনশেষে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ২২ হাজার ২২৯ মেগাওয়াট। ওই সময় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল আট হাজার ৪৬৭ কোটি ৯২ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ৭৪ হাজার ৯৮৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় পড়ে আট টাকা ৮৬ পয়সা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বনি¤œ।

এর আগের (২০২০-২১) অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ২২ হাজার ৩১ মেগাওয়াট। ওই অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল সাত হাজার ৮৫২ কোটি ৪৭ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। তা উৎপাদনে মোট ব্যয় পড়ে ৫১ হাজার ৬৩৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় পড়ে ছয় টাকা ৫৮ পয়সা। অর্থাৎ গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে গড়ে দুই টাকা ২৮ পয়সা বা ৩৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, গত অর্থবছর হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয় পেট্রোবাংলা। মূলত উচ্চ দামের কারণে এলএনজি আমদানি করতে না পারার প্রভাব পড়ে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতিতে। এতে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বেশি চালাতে হয়। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামও নিয়মিত বাড়ছে। এর প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ে।

এদিকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১০ হাজার ৫১৬ মেগাওয়াট। আর ওই অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল চার হাজার ২১ কোটি ৪২ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে সে বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় পড়ে ছয় টাকা ২৮ পয়সা। সে বছরও আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক বেড়ে যায়। এর প্রভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।

এর পরের (২০১৪-১৫) অর্থবছরের চিত্রও প্রায় একই ধরনের। সে অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৭৬৯ মেগাওয়াট। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় চার হাজার ৩৭৩ কোটি ৭৮ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় সামান্য কমে দাঁড়ায় ছয় টাকা ২৭ পয়সা।

আন্তর্জাতিক বাজারে পরের কয়েক বছর তেলের দাম কমায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ও ক্রমেই কমে আসে। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়ায় ১২ হাজার ৩৩৩ মেগাওয়াট। সে সময় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ১৯ কোটি ৩৩ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। আর সে অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় বেশকিছুটা কমে দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ৫৫ পয়সা। এর পরের (২০১৬-১৭) অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় আরও কমে দাঁড়ায় চার টাকা ৯০ পয়সা। সে বছর দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট। আর উৎপাদনের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৫৩৮ কোটি ৪৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা।

২০১৭-১৮ অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় আরও কিছুটা কমে দাঁড়ায় চার টাকা ৮৪ পয়সা। সে বছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ১১৩ মেগাওয়াট। আর উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ছয় হাজার আট কোটি ৯৪ লাখ ইউনিট। তবে পরের অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক বেড়ে যায়। সে (২০১৮-১৯) অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১৮ হাজার ৪৫৮ মেগাওয়াট। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ছয় হাজার ৮৫১ কোটি পাঁচ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। সে বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ৯৫ পয়সা।

এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আবার সামান্য হ্রাস পায়। সে অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১৮ হাজার ৯৬৬ মেগাওয়াট। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৯৪১ কোটি ১৫ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। সে অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় ছিল পাঁচ টাকা ৮৫ পয়সা।