নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে ‘পুরোপুরি স্বৈরতন্ত্র চলছে’ মন্তব্য করে এর বিরুদ্ধে রাস্তার আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন। গতকাল ঢাকায় গণসংহতি আন্দোলনের চতুর্থ জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান তিনি এ আহ্বান জানান।
ড. কামাল বলেন, ‘বর্তমানে দেশের মানুষ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত। বর্তমান সরকারের ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। তারা ক্ষমতা দখল করে আছে, ক্ষমতা ভোগ করে যাচ্ছে। দেশে ষোলো আনা স্বৈরতন্ত্র বিরাজ করছে, পুরোপুরি স্বৈরতন্ত্র চলছে। দেশের মানুষকে এই স্বৈরশাসনের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। সেজন্য জনগণের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’
একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা কামাল হোসেন দাবি করেন, দেশের মানুষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য ‘মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়েই’ আছে। এখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ঐক্য গড়ে তুলতে পারলেই মানুষ রাস্তায় নামবে। রাজপথের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের জনগণ তাদের মালিকানা ফিরে পাবে।
গত নির্বাচনের আগে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে গড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেয়া কামাল হোসেন বলেন, আসুন আমরা শপথ গ্রহণ করি, পরিবর্তনের লক্ষ্যে আলোচনার মাধ্যম ঐক্য গড়ে তুলি।
বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার ‘কোনো নৈতিক অধিকার নেই’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি ভরসা পাচ্ছি, মানুষের ঐক্য হচ্ছে। ডাক দিলেই সবাইকে রাজপথে নেমে আসতে হবে। তারা (ক্ষমতাসীন) যতই ভাবুক, রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে ফেলেছে। আমরা ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে এদের সরাব এবং জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করব।
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের চতুর্থ জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। মূল ব্যানারে লেখা ছিল ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের বাংলাদেশ চাই’ এবং ‘ভোটাধিকার ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলন’।
সারাদেশ থেকে ৩০০ প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশ নেন বলে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি জানিয়েছে। শনিবার ও রোববার সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে হবে প্রতিনিধি সম্মেলনের মূল আয়োজন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ইউনিয়নে কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। এই নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে আমাদের প্রত্যেক জায়গায় জাগতে হবে। এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেতে হবে।
পরিবর্তনের জন্য আমাদের আন্দোলনই একমাত্র পথ, রাস্তাই হলো একমাত্র পথ, রাস্তাই আমাদের মুক্তি। আজকে এখানে যারা আছেন, এই জাতীয় ব্যক্তিত্বরা একত্রে থেকে রাস্তায় নামলে আমি বিশ্বাস করি পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। নির্বাচনের ‘সুষ্ঠু’ পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে দেশে একটি ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের দাবিও তোলেন তিনি।
কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রসঙ্গ ধরে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমি তো বলিÑশুধু নৌকা ডুবছে না, দেশও ডুবতে শুরু করেছে। ১৩ তারিখ কুমিল্লায় ঘটনা ঘটল। আর আমার ধর্মমন্ত্রী আজকে বেড়াতে গেলেন। ১৩ দিন পরে..।
এখন আমরা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর জন্য সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছি জজ মিয়া। দেখা যাক কী হয়, এ সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই না।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের বাইরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রতিনিধি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জাফরুল্লাহ। দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
তার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, রাষ্ট্র সংস্থা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, গণসংহতি আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বক্তব্য দেন।