নিজস্ব প্রতিবেদক: গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষায় দ্রুত সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করার আহ্বান জানিয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, দেশে ৪০ শতাংশ শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। গৃহকর্মী শিশুদের প্রতিনিয়ত মারধরসহ নানা নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট আইন ও সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ ওইসব শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সম্মেলন কক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার ‘গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট আইনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি), শাপলা নীড় ও এডুকো-বাংলাদেশ আয়োজিত সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।
এএসডির কর্মসূচি পরিচালক মো. হামিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সংলাপে বক্তব্য দেন মানবাধিকার কমিশনের সদস্য মো. সেলিম রেজা ও পরিচালক কাজী আরফান আশিক, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব খোন্দকার মো. নাজমূল হুদা শামিম, শাপলা নীড়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর তমকো উচিয়ামা, শিশু অধিকার ফোরামের সভাপতি মো. মাহবুবুল হক, এডুকোর ম্যানেজার আফজাল কবির খান, লেবার ফাউন্ডেশনের মিতু খাতুন, এএসডির ফিরোজা আক্তার শম্পা প্রমুখ।
মানবাধিকার কমিশনের উপপরিচালক মো. রবিউল ইসলামের সঞ্চালনায় সংলাপে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ সরফুদ্দিন খান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিশুশ্রম বিশ্বের কোথাও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই শিশুশ্রম বন্ধ করে শিশুদের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আমরা সভ্য সমাজের বাসিন্দা কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে।
তিনি বলেন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে গৃহকর্মে নিয়োজিত অনেক শিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আবার কারও আশ্রয় হয়েছে যৌন পল্লিতে। এমনকি অনেকে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তাই সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে সব ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে কাজ করছে। শুধু ঝুঁকিপূর্ণ নয়, সব প্রকার শিশুশ্রম বন্ধে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
সিনিয়র সহকারী সচিব খোন্দকার নাজমূল হুদা শামিম বলেন, শিশুশ্রম বন্ধে শ্রম মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের টার্গেট ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ইতোমধ্যে চারটি প্রকল্পের আওতায় ৪ লাখ শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা শিশুশ্রম নিরসন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিলে শ্রম মন্ত্রণালয় সাপোর্ট দেবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন তিনি।
গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেন মো. হামিদুর রহমান। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) আলোকে সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম নিরসনে অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকারের এই প্রতিশ্রুতি ও ঘোষিত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু গৃহকর্মীর অধিকার ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও তার সফল বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
সংলাপে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বিদ্যমান আইনি কাঠামোর দুর্বলতা এবং নীতিমালাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় গৃহকর্মী শিশুরা মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই নতুন আইন প্রণয়ন জরুরি। ইতোমধ্যে গৃহকর্মী সুরক্ষা আইনের একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রবন্ধে।