Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 3:51 pm

দেশ ছাড়তে আগ্রহী চীনের মধ্যবিত্তরা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: চীনের সাংহাইয়ের বাসিন্দা অ্যালান লি (ছদ্মনাম) তার পরিবারের জন্য দেশে আর কোনো ভবিষ্যৎ দেখছেন না। সরকারের শূন্য কভিড নীতির কারণে তার ব্যবসায় ধস নেমেছে। সন্তানের পড়ালেখা ও কভিড বিধিনিষেধের হয়রানি থেকে বাঁচতে দেশ ছেড়ে বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশে চলে যেতে চান তিনি। খবর: দ্য ব্যাংকক পোস্ট।

অ্যালান লির মতো আরও অনেকে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি চীন ছাড়তে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সাংহাইয়ে কভিড-১৯-এর প্রকোপ আবার বেড়ে যাওয়ায় কয়েক মাস ধরে জারি রয়েছে লকডাউন। অ্যালান লি লকডাউনের পর সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি এখন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে হাঙ্গেরিতে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। সেখানে তিনি আরও ভালো থাকার আশা করছেন এবং একই সঙ্গে তার ১৩ বছর বয়সী ছেলেকে একটি আন্তর্জাতিক স্কুলে পড়ালেখা করানোর চিন্তা করছেন।

নিজের নাম গোপন রাখার শর্তে বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, চলতি বছর আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তার অর্থ, আমাদের অবস্থাও শেষ। আমরা সঞ্চয় ভেঙে ৪০০ কর্মীকে (লকডাউনের সময়) বেতন দিচ্ছি। এই শীতে আবার এমন পরিস্থিতি যদি হয়? সাংহাইয়ের দীর্ঘ লকডাউন সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। খাদ্য সংকটের কারণে প্রতিবাদ করছেন এখানকার মানুষ। জীবিকা ও জীবনযাপনের পরিস্থিতি মুখ থুবড়ে পড়ায় এখন নিজ দেশ ছেড়ে অন্যত্র যেতেও তারা আর দ্বিধা করছেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পরীক্ষা সবই বন্ধ।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়ও ভর্তির আবেদন বন্ধ রয়েছে।

অ্যালান লি তার ছেলেকে ব্যয়বহুল দ্বিভাষিক শিক্ষা দিয়েছেন, যেখানে প্রায় দুই বছর ধরে অনলাইনে পড়ালেখা করতে হয়েছে। এতে তিনি হতাশ হয়েছেন। এ ছাড়া বেইজিং পাঠ্যক্রমের ওপর নজরদারি যেভাবে কঠোর হচ্ছে, সে সম্পর্কেও তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, এটা অবশ্যই আমাদের শিশুদের জন্য বড় অপচয়। অ্যালান লি একটি ইউরোপীয় বিনিয়োগ প্রকল্পের সুবিধা নিতে সক্ষম হয়েছেন, যা তাকে ও তার পরিবারকে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে বসবাসের অনুমতি দিয়েছে। তার মতো অনেকে জানেন, তাদের সব সম্পদ বিক্রি করলে কোনো রকমে ইউরোপের কোনো দেশে মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।

বেইজিংভিত্তিক অভিবাসন পরামর্শদাতা গুও শিজে জানান, তার কোম্পানিতে গত মার্চ থেকে অনেক মানুষ খোঁজ নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে সাংহাই ক্লায়েন্টদের সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। এমনকি লকডাউন কিছুটা শিথিল হলেও আবেদনের অনুরোধ দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে এ সময়ে। মানুষের মধ্যে দেশত্যাগের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা শিগগির কমে আসার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন তিনি।

কভিড-১৯ ঝুঁকির কারণে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীন। এমনকি দেশত্যাগ করতে চাইলে নাগরিকদের জন্য কঠোর নীতি আরোপ করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ইন্টারনেটে ‘দেশত্যাগ’ শব্দটি ব্যবহারে কড়াকড়ি করা হয়েছে। এর পরিবর্তে ‘রান’ শব্দটি ব্যবহার করছেন দেশত্যাগে ইচ্ছুক নাগরিকরা। পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। ২০২১ সালের প্রথমার্ধে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালের মতো পাসপোর্টের মাত্র দুই শতাংশ ইস্যু করেছে। জার্মানিতে অভিবাসী এক চীনা নারী এমিলি (ছদ্মনাম) বলেন, তিনি চীনা নাগরিকদের কাছ থেকে কয়েক ডজন বার্তা পেয়েছেন, যারা পালানোর টিপস খুঁজছেন। এমিলি তার এক আত্মীয়র জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেছেন, কিন্তু তার আবেদন বাতিল করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। তার কাছে বিষয়টি হাস্যকর মনে হয়েছে। তিনি জানান, কালোবাজারে ৩০ হাজার ইয়ুয়ান (চীনা মুদ্রা) বা সাড়ে চার হাজার ডলার দিয়ে পাওয়া যায় পাসপোর্ট।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন প্রযুক্তি ফ্রিল্যান্সার জানান, গত অক্টোবরে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ ছাড়াই তার তুরস্ক সফর বাতিল করে দেয়। তার ভ্রমণবৃত্তান্ত তাদের কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি। তবে কয়েক সপ্তাহ পর ভিন্ন উপায়ে চীনের আধা-স্বায়ত্তশাসিত ম্যাকাউয়ে পাড়ি জমান তিনি।