Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:25 pm

দেশ থেকে বড় অঙ্কের অর্থপাচার হয়েছে: গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশ থেকে বড় অঙ্কের অর্থপাচার হয়েছে। সাধারণত দুভাবে সম্পদ পাচার হয়। আন্ডার ইনভয়েসিং (পণ্যের দাম কম দেখিয়ে) এবং ওভার ইনভয়েসিং (পণ্যের দাম বেশি দেখিয়ে)। এতে একদিকে দেশের টাকা বিদেশে চলে গেছে। অন্যদিকে কর ফাঁকি দেয়া হয়েছে। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে চার ভাগের এক ভাগ দামে এলসি খুলেছেন অনেক গ্রাহক। কাজটা করেছেন ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার জন্য। তবে বাকি তিন ভাগ অর্থ নিশ্চয়ই হুন্ডির মাধ্যমে পরিশোধ করেছেন। বিষয়গুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে। এরই মধ্যে অনেকাংশে এই কাজগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও কমবে বলে আশা ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছের, একেএম সাজেদুর রহমান খান, বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হকসহ গবেষণা বিভাগের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

ডলার মার্কেট নিয়ে গভর্নর বলেন, ডলার সংকট প্রবল হয়ে উঠেছিল কয়েক মাস আগে। তাই প্রথম টার্গেট ছিল আমদানি কমানো। আমদানি যাতে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের সমান হয়, সে টার্গেট  পূরণে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যৌথভাবে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। এর মধ্যে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং হয়েছে কি না, সেটা দেখেছি। এসব কাজ করে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করা হয়। ফলে আমদানি কমে এসেছে। এখন দেখা যাচ্ছে আমদানির তুলনায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বেশি এসেছে।  ফলে ডলারের যে চাপ ছিল, সেটা অনেকটা কমে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, আমদানির এলসি খোলা কমানোর প্রভাব রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর পড়বে না। সেভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তারল্য সহায়তা দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, কোনো ব্যাংক সমস্যায় পড়লে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করে। তিনি উদহারণ দিয়ে বলেন, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকে গ্রাহকের আমানত রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকটির এক কোটি ৯০ লাখ অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এখানে শেয়ারহোল্ডারের চেয়ে বেশি টাকা রয়েছে সাধারণ মানুষের। ব্যাংক সমস্যায় পড়লে এসব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের কথা চিন্তা করেই এই সহায়তা দেয়া হয়েছে। ব্যাংকটিকে যেভাবে টাকা দেয়া হয়, তাতে কোনো ঝুঁকি নেই।

তিনি আরও বলেন, দেশের ইতিহাসে একটি ব্যাংকও বন্ধ হয়নি। ভবিষ্যতেও বন্ধ হবে না। কারণ কোনো ব্যাংক সমস্যায় পড়লে তা সমাধানে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বাত্মক সহায়তা করে। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো প্রভাবশালীর গোষ্ঠীর চাপে রয়েছে কি নাÑএমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো চাপে নেই। এটা প্রথম দিনই বলেছি। এর চেয়ে বড় চাপের জায়গায় থেকে কাজ করে এসেছি। সুতরাং কোনো চাপই এখন চাপ মনে হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে। নিয়মের বাইরে কাউকে সুবিধা দেয়া হয় না। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবাইকে গ্রাহক হিসেবে দেখে। এটা প্রতিটি ব্যাংকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর ডলারের অনিয়মের বিষয়ে গভর্নর বলেন, ডলার কেনাবেচায় অনৈতিকভাবে ১২টি ব্যাংক এক হাজার ৩৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করেছে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সব ব্যাংক ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।