শরীরে হাজারো জটিল কাজকর্ম চলছে একই সময়ে। কে এর খবর রাখে? সবই হরমোনের কল্যাণে। শরীরের ভেতরে আছে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি, এগুলো নিঃসরণ করে হরমোন। উৎপত্তিস্থল থেকে দূরে এই রস দেহের অঙ্গের ওপর ক্রিয়া করে। খিদে বা পেশির গঠন সবকিছুতে লাগে হরমোন। কৈশোরের বাড়তি ওজন হতে পারে হরমোনের অসুখের জন্য। কৈশোরের ব্রণ, নতুন মা হওয়া নারীর চুল উঠে যাওয়া, হঠাৎ ফোলা ভাব, মেয়েদের থুতনি বা ঠোঁটের ওপর ঘন লোমÑএসব কারণের পেছনে রয়েছে হরমোন।
শরীরে অর্ধশত হরমোন আছে। এখানে ছয়টি হরমোন নিয়ে কিছু বলা হলো।
ইনসুলিন: রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে এই হরমোন। আমরা শর্করা খেলে পরিপাক হয়, সব শেষে হয় গ্লুকোজ, এই গ্লুকোজ পরিপাক নল থেকে বেরিয়ে যায় রক্তে; আর সেখান থেকে ভ্রমণ করতে করতে যায় দেহের কোষে কোষে। কিন্তু কোষের দরজায় রয়েছে কড়া দ্বাররক্ষী এই ইনসুলিন। ইনসুলিন দ্বার খুলে দিলে তবেই গ্লুকোজ ঢুকতে পারে দেহের কোষে, এরপর হয় এর দহন; আর তখন তৈরি হয় শক্তি। এটিই আমাদের কাজ করার শক্তি। ইনসুলিন আসে আমাদের অগ্ন্যাশয় থেকে, বিশেষ কোষ এটি নিঃসরণ করে। এর নাম বিটা সেল। এমন যদি হয়, শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারল না, অথবা শরীরের কোষ ইনসুলিনের প্রতি সাড়া দিল না, তখন শরীর এই গ্লুকোজ মোকাবিলা করতে পারে না। তখন রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ আর এই রোগের নাম ডায়াবেটিস।
শিশুদের হয় টাইপ-১ ডায়াবেটিস। একেবারে ইনসুলিন নিঃসরণ হয় না, তখন অবশ্য বাঁচার জন্য দিতে হয় ইনসুলিন ইঞ্জেকশন।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস হয় বড়দের, যারা স্থূল। তাদের ইনসুলিন তৈরি হয় কম; কিন্তু কাজে লাগে না, শরীর এর প্রতি সাড়া দেয় না। তখন চিকিৎসক জীবনশৈলীতে পরিবর্তন, ডায়েট ও ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন। মেনে চললে পরিপূর্ণ জীবনযাপন সম্ভব।
একে অবহেলা করলে তৈরি হয় নানা জটিলতা। যেমন রক্তনালির ভেতরে চর্বির পলি পড়ে শক্ত হয়ে যায়। একে বলে এথারোস্ক্লেরসিস, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি বিকল, পায়ে হতে পারে গ্যাংগ্রিন, অন্ধত্ব এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হয় খর্ব। তাই সব সময় ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলবেন। (বাকি অংশ আগামীকাল)
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
সাবেক অধ্যক্ষ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ