দেহে হরমোনের খেলা আর সুস্বাস্থ্য

গতকালের পর

লেপটিনকে বলা হয় তৃপ্তি হরমোন। আমরা আহারের পর একসময় ‘আর নয় খাওয়া পেট হয়েছে ভরাট’ এমন সংকেত আসে। তাই খেতে থাকলে লেপটিন মান বাড়তে থাকে আর ক্ষুধা কমতে থাকে। ওজন হ্রাস আর দেহের চর্বির পেছনে ইচ্ছাশক্তি কম ভূমিকা রাখে না। ব্যাপারটি জিন আর হরমোন দুটি মিলেই। সুস্থ দেহে লেপটিন মগজকে বলে দেয়, দেহে আছে যথেষ্ট মেদ, খিদে কমল। খাই খাই থাকবে না। অনেক স্থূলদেহী লেপটিনে সাড়া দেয় না, মগজ তাই লেপটিনের সংকেত ব্যাখ্যা করতে পারে না; আর স্থূল লোকটি খেতেই থাকেন। অনেকে বলেন, এর পেছনে আছে জিন, ডায়েট আর প্রদাহ। জিন বাগে আনা না গেলেও বাকি দুটি সামাল দেয়া যায়। প্রদাহ হওয়ার কারণ ত্রুটিপূর্ণ খাবার আর চাপ। প্রক্রিয়া করা খাবার বাদ দিন, তবে প্রোটিন যথেষ্ট খাবেন। সেই সঙ্গে ব্যায়াম আর সুনিদ্রা দরকার। গ্লুকাগন হলো ইনসুলিনের বিরুদ্ধ হরমোন। ইনসুলিন রক্তের গ্লুকোজ কমিয়ে রাখতে চেষ্টা করে আর গ্লুকাগন চায় বাড়াতে। এই দুটি হরমোনের খেলায় স্থিতি থাকে রক্তের গ্লুকোজ। দুটিই নিঃসৃত হয় অগ্ন্যাশয় থেকে ক্রমে ভিন্ন কোষ থেকে, গ্লুকাগন নিঃসৃত হয় আলফা কোষ থেকে। অনেক সময় হাইপো হলে গ্লুকাগন এক ভরসা।

কোর্টিসলকে বলা হয় স্ট্রেস হরমোন, শারীরবৃত্তে এর অনেক ভূমিকা। খুব স্ট্রেস হলে রক্তের সুগার থাকে না সুস্থিত, কমে আসে তখন গ্লুকাগন একে বাড়াতে চেষ্টা করে আর সেই সঙ্গে কোর্টিসল। কোর্টিসল নিঃসৃত হয় এড্রিনাল গ্রন্থি থেকে; আর তখন শুরু হয় নব গ্লু কোজ জনন, বিজ্ঞানে বলে নিও গ্লু কো জিনেসিস। প্রোটিন থেকে তৈরি হয় গ্লুকোজ। স্ট্রেস হলে দরকার এনার্জি। এদিকে কোর্টিসল মেদ কোষকে নির্দেশ দেয় মেদ ভেঙে শক্তি জোগাতে। ক্ষণকালের জন্য কোর্টিসল ভরসা হলে, দীর্ঘদিনের মান বেড়ে হতে পারে নানা অসুখ। ঘ্রেলিন হরমোন বলে দেয় খিদে লেগেছে। শক্তি নিয়ন্ত্রণে এর অনেক অবদান। ঘ্রেলিন নিঃসৃত হলো। পাকস্থলী খালি, দেহ তৈরি হলো খাওয়ার জন্য। এই লেপটিন আর ঘ্রেলিন দুটি কাজ করে সমন্বিতভাবে; আর দেহের ওজন ও এনার্জি থাকে ঠিকঠাক। টেসটোস্টেরন পুং যৌন হরমোন। তবে উভয় লিঙ্গের জন্য আছে এর গুরুত্ব। অবশ্য পুরুষের ব্যবহার বেশি এই হরমোনের। যৌন কামনা, কাজকর্ম। [শেষ]

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী

সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০