দেড় কোটি টাকা পরিশোধে মীর ব্রাদার্সের তালবাহানা

জাকারিয়া পলাশ : বেশ কয়েক বছর ধরেই ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার টিকিট বিক্রির একক ইজারাদার মীর ব্রাদার্স। প্রতি বারই সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে বাণিজ্যমেলার কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। লাখ লাখ টিকিট বিক্রি করে একচেটিয়া ব্যবসা করে চলা এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার ভ্যাট ও ট্যাক্স দিতে তালবাহানার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বছরও বাণিজ্যমেলার টিকিট বিক্রির ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ দেড় কোটি টাকা সরকারকে এখনও দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে ‘ভ্যাটখেলাপি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে ইপিবি।

সূত্রমতে, ৭ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বাণিজ্যমেলার টিকিট বিক্রির ইজারা নিয়েছিল মীর ব্রাদার্স। এ মূল টাকার ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), পাঁচ শতাংশ আয়কর (ট্যাক্স) ও সিটি করপোরেশনের প্রমোদ কর বাবদ (১০ শতাংশ) প্রায় আড়াই কোটি টাকা পরিশোধের কথা ছিল। এর মধ্যে দুই ধাপে সাড়ে ৮১ লাখ টাকা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মীর ব্রাদার্সের কাছে এখনও সরকারের পাওনা রয়েছে এক কোটি ৫০ লাখ ৩২ হাজার ১৯৩ টাকা।

জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ২০১৮ সালের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ছয় কোটি পাঁচ লাখ টাকা দর ঘোষণা করে টিকিট বিক্রির ইজারা পেয়েছিল মীর ব্রাদার্স। ওই টাকার ওপর ৯০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ভ্যাট, ৩০ লাখ ২৫ হাজার টাকা আয়কর ও ৬০ লাখ ৫০ হাজার টাকা সিটি করপোরেশনের প্রমোদ কর আরোপিত হওয়ার কথা। এ তিন খাতে সব মিলিয়ে এক কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওনা হয়। এর মধ্যে এক কোটি ২১ লাখ টাকা এনবিআর এবং সাড়ে ৬০ লাখ টাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পাওনা। ডিআইটিএফ ফান্ডেই এ টাকা জমা দেওয়ার কথা।

পরে মেলার মেয়াদ চার দিন বাড়ানোয় মূল দর ও ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ আরও এক কোটি এক লাখ ৪৮ হাজার ৩৮৭ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এসব পাওনা আদায়ে মেলার আয়োজক ইপিবির পক্ষ থেকে নভেম্বরের ১৩ তারিখ থেকে শুরু করে চারবার তাগিদপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু মীর ব্রাদার্সের পক্ষ থেকে দরপত্রের মূল অর্থের বাইরে ভ্যাট-ট্যাক্সের বড় অংশই পরিশোধ করা হয়নি।

এ বিষয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ইপিবি থেকে সড়ক ভবনের প্রধান প্রকৌশলী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সিইও, কাস্টমসের কমিশনারসহ বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই পত্রে ভ্যাট, আয়কর ও প্রমোদ কর সম্পূর্ণ পরিশোধ না করায় ভ্যাটখেলাপি হিসেবে মীর ব্রাদার্সকে তালিকাভুক্ত করার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ইপিবির সচিব ও ডিআইটিএফ-২০১৮ সচিবালয়ের পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘মীর ব্রাদার্স গত সাত-আট বছর ধরেই সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মেলার কাজ নিচ্ছে। অন্যান্য বছরের নথিপত্র দেখা যাচ্ছে তারা প্রতি বছরই ভ্যাট-ট্যাক্সের টাকা দিতে কিছুটা দেরি করে। আমরা আমাদের মূল বিডিংয়ের টাকা পেয়েছি। বাকি টাকার মূল পাওনাদার ইপিবি নয়, এনবিআর। আমরা শুধু সেটা আদায়ের চেষ্টা করছি। এবারও কিছুটা সময় চেয়েছে মীর ব্রাদার্স। আমরা এখন আলোচনা করছি যে তাদের সময় দেওয়া যায় কি না। তবে টাকা না দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। টাকা না দিলে তারা কালো তালিকাভুক্ত হয়ে পড়বে।’

উল্লেখ্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবি যৌথভাবে প্রতি বছর জানুয়ারি মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা আয়োজন করে। এতে প্রায় অর্ধকোটি ক্রেতা-দর্শনার্থী টিকিট কেটে প্রবেশ করে। ওই প্রবেশ টিকিটের ইজারা কাজ নিয়েছিল মীর ব্রাদার্স। এছাড়া প্রধান প্রবেশদ্বার সংলগ্ন কাউন্টার ব্র্যান্ডিং ও দ্বিতীয় প্রবেশদ্বার সংলগ্ন কাউন্টার ব্র্যাডিংয়ের কাজও পায় এ প্রতিষ্ঠানটি। ওই সব মিলিয়ে সাত কোটি ৫৯ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৪ টাকা দর নির্ধারিত হয়। ওই কাজের ওপরই ভ্যাট ও আয়কর বাবদ দেড় কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির। সূত্রমতে মেলা শুরুর এক মাস আগেই ওই অর্থ পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু মেলা শেষ হওয়ার পর আরও এক মাস পেরিয়ে গেলেও সে টাকা পরিশোধ করা হয়নি।

অবশ্য এ টাকা দ্রুতই দিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মীর ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মীর শহিদুল আলম। জানতে চাইলে শেয়ার বিজকে তিনি বলেন, ‘এবার মেলার দায়িত্ব নিয়ে আমাদের খুব একটা ব্যবসা হয়নি। কোনো রকমে আসল টাকাটা উঠাতে পেরেছি। শীতে মেলার প্রথম ১৮ দিনে লোকজন যায়নি। ফলে টিকিট বিক্রি কম হয়েছে। এ অবস্থায় ভ্যাট-ট্যাক্সের টাকাগুলো দেওয়ার জন্য আমরা কিছুদিন সময় চেয়েছি। আগের বছরও আমাকে সময় দেওয়া হয়েছিল। মে মাসের ২০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করে দেব।’

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০