Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:49 pm

দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে চিকিৎসা

প্রতিনিধি, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): ভবনের ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। ছাদের রড বের হয়ে আছে। বিমের বেশিরভাগ জায়গাজুড়ে ফাটলের দাগ। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে শয্যা ও মেঝে ভিজে যায়। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ৫০ শয্যার পরিবর্তে ১৯ শয্যায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক রোগী। এ অবস্থা ঢাকার দোহার উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। এর ফলে সব সময় ঝুঁকিতে থাকতে হয় রোগী, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের। যে কোনো মুহূর্তে ভবন ধসে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনাÑএই আশঙ্কায় থাকেন সবাই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৬৫ সালে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ভবনটির অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। ৪৪ বছর পর ২০০৯ সালে ভবনটি একবার সংস্কার করা হয়েছিল। প্রায় তিন বছর আগে ভবনটির নারী রোগীদের জন্য ওয়ার্ডটি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

গত সোমবার দুপুরে দেখা যায়, দোতলায় নারী ওয়ার্ডের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। ওয়ার্ডের ফটকে ‘ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখাসংবলিত একটি লাল রঙের সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। ভবনটির ছাদের বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে পড়ায় রড ও ইটের সুরকি দেখা যাচ্ছে। দেয়ালের বিমজুড়ে বড় বড় ফাটল। এর নিচে রোগীদের শয্যা। তারা সেখানে অবস্থান করে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। এ অবস্থায় চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম।

উপজেলার বিলাসপুর গ্রামের বাসিন্দা আজগর আলী বলেন, ‘আমার মেয়ে কয়েক দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত। দুই দিন আগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছি। ওইদিন আমার চোখের সামনে এক রোগীর মাথায় ছাদ থেকে পলেস্তারার বড় টুকরা খসে পড়ে। এরপর থেকে ছাদের দিকে তাকালেও ভয় হয়। এ নিয়ে আতঙ্কে থাকি কখন যেন আমার ওপরও পলেস্তারা খসে পড়ে।’

পেটে ব্যথা নিয়ে তিন দিন আগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন মাহেলা বেগম। তিনি বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা ভাড়াসহ চিকিৎসা খরচ অনেক বেশি। তাই উপায় না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনে চিকিৎসা নিচ্ছি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নার্স জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। ভবনটির বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোনো সময় এটি ধসে যেতে পারে। প্রায় সময় শোনা যায় রোগীদের ওপর ছাদের পলেস্তারা পড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরাও দায়িত্ব পালনকালে ভয়ে থাকি। বিকল্প না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে শিগগিরই ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা উচিত। নয়তো যে কোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

এ বিষয়ে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জসিমউদ্দিন বলেন, তার জানামতে ভবনটি নতুনভাবে নির্মাণের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।