Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 2:42 am

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যয় বেড়ে ২২৭৬ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে দুই হাজার ২৭৬ কোটি টাকার বেশি। ভোটের দায়িত্বরতদের ভাতা, ভোটের উপকরণ প্রভৃতি খাতে ব্যয় বাড়ায় মোট ব্যয় বাড়ছে। প্রাথমিকভাবে নির্বাচন আয়োজনে বাজেট বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৪৫৪ কোটি ৪৯ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। এর তিন ভাগের দুই ভাগ রাখা হয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। তবে নির্বাচন আয়োজনের ব্যয় অনেকটাই বেড়েছে। এজন্য বাড়তি বরাদ্দও দেয়া হয়েছে।

ইসি (নির্বাচন কমিশন) কর্মকর্তারা জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় দুই হাজার ২৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আর নির্বাচন পরিচালনা খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৫০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যদিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাজেট ছিল ৭০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয় বেড়ে প্রায় সোয়া তিনগুণ হয়েছে।

১১ কোটি ৯৭ লাখ ভোটারের জন্য আয়োজিত এবারের নির্বাচনে ৬৬ রিটার্নিং অফিসার, ৫৯২ সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রায় তিন হাজার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং হাজারের বেশি বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত হয়েছেন। এছাড়া ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে ৯ লাখের মতো জনবল থাকছেন। সেই সঙ্গে প্রায় আট লক্ষাধিক আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ৩০০ আসনের জন্যই ৩০০ নির্বাচনী তদন্ত কমিটি নিয়োগ করা হয়েছে, যেখানে দায়িত্ব পেয়েছেন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা।

সবশেষ ২০১৮ সালের একাদশ সংসদের তুলনায় ২০২৪ সালে ভোটার, ভোটকেন্দ্র, ভোটকক্ষ যেমন বেড়েছে, তেমনই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, নির্বাচনী কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জামও বেশি ব্যবস্থাপনা করতে হয়েছে। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপ্তি ১০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৩ দিন করা হয়েছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সম্মানীসহ জ্বালানি ও পরিবহন খাতের বরাদ্দও বেড়েছে।

ইসির নির্দেশনায় গত ২৯ ডিসেম্বর বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নেমে গেছেন। তারা ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকবেন। তার আগে নেমেছেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। যদিও আগে একেক বাহিনী একেক সময় মাঠে নামত বিধায় ব্যয় কম হতো।

বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে এবারই প্রথম প্রিজাইডিং-পোলিং অফিসারসহ নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দুদিনের সম্মানী ভাতা দেয়া হবে। এর ফলে আগের নির্বাচনের তুলনায় এবারে ব্যয় হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি অর্থ। এবারের নির্বাচনে আসনপ্রতি ব্যয় দাঁড়িয়েছে সাড়ে সাত কোটি টাকার বেশি। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত ব্যয়ের চাহিদা অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে তারা বরাদ্দ দেয়াও শুরু করেছে, যা বিভিন্ন জেলার ডিসিদের মাঝে বণ্টন করা হয়েছে।

তথ্যমতে, নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে এক দিনের জন্য প্রিজাইডিং অফিসার চার হাজার টাকা, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার তিন হাজার টাকা ও পোলিং অফিসার দুই হাজার করে টাকা পাবেন। এছাড়া যাতায়াত ভাড়ার জন্য তারা সবাই অতিরিক্ত জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে পাবেন। এছাড়া প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোট প্রদানের গোপন কক্ষ ও বেষ্টনীর জন্য প্রতিটি কক্ষের জন্য ৮০০ টাকা করে দেয়া হবে।

ব্যালট পেপার আনা-নেয়া, রিটার্নিং অফিসারের সহায়ক কর্মকর্তাদের যাতায়াত ছাড়াও সারা দেশে যেসব ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনের দিন কাজ করবেন তারাও ভাতা পাবেন। ম্যাজিস্ট্রেট বা ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাসম্পন্ন কর্মকর্তারা নির্বাচনের আগে ও পরের দুই দিনের সহ মোট পাঁচ দিনের জন্য দিনে জনপ্রতি ৯ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। এছাড়া স্টাফ ভাতা হিসেবে তারা প্রতিজন প্রতিদিনের জন্য পাবেন আরও এক হাজার টাকা। অর্থাৎ একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মানী বা নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের জন্য ভাতা দিতে নির্বাচন কমিশনের ব্যয় হবে ৫০ হাজার টাকা।

এদিকে ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচন পরিচালনার জন্য মোট ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। যদিও পরে তা আরও বেড়েছিল। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ৮১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে ব্যয় হয় ১৮৩ কোটি টাকা। সেবার নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ভোট হয়। আর ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন একক প্রার্থীরা। অর্ধেক এলাকায় ভোট করতে না হওয়ায় বরাদ্দের তুলনায় খরচ অনেক কম ছিল।

অন্যদিকে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়, যাতে ভোটার ছিল আট কোটি ১০ লাখের বেশি। উপকরণ ও ব্যবস্থাপনাসহ সব খাতে ব্যয় বাড়ার কারণে ধীরে ধীরে নির্বাচনী বরাদ্দও বাড়ে। তার আগে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে মোট ব্যয় হয় ৭২ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আর ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বাবদ ব্যয় হয়েছিল ১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

প্রসঙ্গত, এবার ১১ কোটি ৯৭ লাখ ভোটারের এ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজারের বেশি। আর ভোটকক্ষ রয়েছে দুই লাখ ৬১ হাজারের বেশি। এছাড়া প্রতি কেন্দ্রে থাকবেন ১৫-১৭ নিরাপত্তা সদস্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে আনসার সদস্য রয়েছেন পাঁচ লাখ ১৬ হাজার জন, পুলিশ ও র‌্যাব থাকছেন এক লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন, কোস্টগার্ড দুই হাজার ৩৫০ জন এবং ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন বিজিবি সদস্য থাকবেন। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য থাকছেন প্রায় অর্ধ লাখ। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা এবং ইসি সচিবালয় ও প্রশিক্ষণেও বিপুল অর্থ খরচ হয়েছে।