ক্রীড়া প্রতিবেদক: ওয়েলিংটন থেকে ক্রাইস্টচার্চ। বদলেছে মাঠ, বদলেছে আবহাওয়া। কিন্তু ইনজুরি আক্রান্ত তিন সেরা ব্যাটসম্যানহীন ‘অনভিজ্ঞ’ বাংলাদেশের বদলায়নি কোনো কিছুই। বরাবরের মতো গতকালও ভালোই এগোচ্ছিল টাইগারদের ইনিংস। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের আত্মহত্যায় শেষ পর্যন্ত দিনের খেলা ৫.৩ ওভার আগেই ২৮৯ রান তুলতেই অলআউট সফরকারী দল।
এই ম্যাচে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে নুরুল হাসান সোহান ও নাজমুল হোসেন শান্তর। হতাশ করেনি তারা। দলের বিপর্যয়ে ৫৩ রানের জুটি গড়েন তারা। ফর্মে ফেরার লড়াইয়ে থাকা সৌম্য সরকার গতকাল টেস্ট সর্বোচ্চ ৮৬ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন। অভিজ্ঞদের মধ্যে সামনে থেকে পথ দেখাচ্ছিলেন সাকিব। কিন্তু এদের কেউই পারেনি দলের স্কোরটাকে বড় করতে।
ক্রাইস্টচার্চে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ও রাতে বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে আবহাওয়া ভালো থাকলেও যথারীতি বাতাসের দাপট ছিল। কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া তাপমাত্রা নামিয়ে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এনেছিল। যে কারণে টস জিতে প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের।
নিউজিল্যান্ড সফরের শুরু থেকে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের গতি, সুইং আর বাউন্সে কাবু করছেন স্বাগতিক বোলাররা, যা গতকালও ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে দেখা গেলো। রুবেল হোসেন, কামরুল ইসলাম রাব্বিরা বেশ কয়েকবারই প্রতিপক্ষ বোলারদের বাউন্স আর সুইংয়ে পড়েছেন বিপদে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নামা রুবেল হোসেন তো ট্রেন্ট বোল্টের বাউন্সারে ডান হাতের কুনইয়ে আঘাত পেয়ে বেশ কিছুক্ষণ মাঠের মধ্যে শুয়ে পড়েন। পরে ফিজিওর হালকা চিকিৎসায় আবার ব্যাট করেন। এর কয়েক বল পরই শেষ সফরকারীদের ইনিংস।
গতকাল ইনিংসের শুরুতেই টিম সাউদির লেগ স্ট্যাম্পের পাঁজরের কাছে লাফিয়ে বলে অহেতুক মারগে গিয়ে আউট হন তামিম ইকবাল। ইমরুল কায়েক, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম ইনজুরির কারণে একাদশে না থাকায় এদিন দলের ব্যাটিং অর্ডারে বেশ পরিবর্তন আসে। তাই তো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার নামলেন তিনে। কিন্তু তিনিও ক্রিজে ছিলেন না বেশিক্ষণ। বোল্টের ইন সুইংগারে পরাস্ত হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে তামিমের দেখানো পথ অনুসরণ করেন এ ডানহাতি। তবে এক প্রান্তে আগলে রেখে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে দারুণ খেলে যাচ্ছিলেন ফর্মে ফেরার লড়াইয়ে থাকা সৌম্য সরকার। তৃতীয় উইকেটে এ জুটি দলীয় স্কোরের সঙ্গে ১২৭ রান যোগ করেন। যে কারণে সফরকারীরা বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখতে থাকেন। তবে সেঞ্চুরি থেকে ১৬ রান দূরে সৌম্য আউট হলে দ্রুত পথ হারায় বাংলাদেশ। এরপর সাব্বির আর সাকিব ফিরলেন সাজঘরে। প্রথম দিনের আসল চমকটা তখনই। চা বিরতি পর্যন্ত ওই পাঁচ উইকেটেই বাংলাদেশের রান ২২৫।
এদিকে অভিষেক টেস্টে খেলতে নামা নুরুল হাসান ও সোহান ও নাজমুল হোসেন শান্ত ষষ্ঠ উইকেটে গড়লেন ৫৩ রানের জুটি। দুজনই বেশ খেলছিলেন। কিন্তু এ জুটিকে আর এগোতে দেননি সাউদি। নাজমুলকে জিট রাভালের ক্যাচে ফেরান তাকে। এরপর কামরুল ইসলাম রাব্বিকে নিয়ে দিনের বাকিটা সময় পার করতে চেয়েছিলেন সোহান। তাকে যোগ্য সঙ্গও দিয়ে যাচ্ছিলেন রাব্বি। তবে বাধা হয়ে দাঁড়ান বোল্ট। অভিষেকে হাফ সেঞ্চুরি থেকে ৩ রান দূরে থেকে সাজঘরে ফেরেন সোহান। শেষ দিকে রুবেলের ১৬ রানে ৩০০ ছুঁই ছুঁই ইনিংসের আগেই অলআউট টিম টাইগার্স। বলা যায় চোট আক্রান্ত বাংলাদেশের ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম দিন খারাপ যায়নি। এবার বোলারদের পালা। কী করে সেটাই এখন দেখার বিষয়। তাদের ওপরই অনেকটা নির্ভর করবে এ টেস্টের গতি-প্রকৃতি। যদিও টাইগারদের প্রথম ইনিংস সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের অনেক হিসেবেই প্রায় মিলেছে। তারপরও খেলাটা যে ক্রিকেট। ক্ষণে ক্ষণে যার রূপ যে বদলায়!
Add Comment