ইসমাইল আলী: চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে দেশের সব জাতীয় মহাসড়ক। এরই অংশ হিসেবে এবার চার লেন করা হবে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়ক। কুমিল্লার ময়নামতি থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধরখার পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার চার লেন করতে প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) এরই মধ্যে চূড়ান্ত করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়বে ১০৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
ডিপিপিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার পাশাপাশি ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক সার্ভিস লেন করা হবে। তবে ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাজার এলাকায় চার দশমিক ৪৭ কিলোমিটার কংক্রিটের ঢালাই হবে। এছাড়া ১৪টি ছোট-মাঝারি সেতু, একটি ফ্লাইওভার, দুটি আন্ডারপাস, ৫০টি কালভার্ট ও ১২টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এতে সিলেট ও চট্টগ্রামের মাঝে দ্রুত ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
ভারতের ঋণের (এলওসি) আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ভারত থেকে তিন হাজার আট কোটি ৩৫ লাখ টাকা ঋণ চাওয়া হয়েছে। আর সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে দুই হাজার ৬৮১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে পাঁচ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যয়বহুল চার লেন প্রকল্প। তবে শেষ পর্যন্ত এ ব্যয় আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে গত বছর ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন প্রকল্প গ্রহণ করে সওজ। ৫৫ কিলোমিটার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ছয় হাজার ৮৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ১২৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হিসেবে এটি বিশ্বে সবচেয়ে ব্যয়বহুল। যদিও প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল পাঁচ হাজার ২৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। তবে প্রকল্পটিতে তিন দফায় এক হাজার ৮২২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে।
এদিকে জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা চার লেন নির্মাণকাজ চলছে। ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের ব্যয় তৃতীয় দফা বাড়ানো হচ্ছে। নতুন হিসাবে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৯৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়বে ৮৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এছাড়া গত বছর নেওয়া হয় এলেঙ্গা-রংপুর চার লেন প্রকল্প। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আর গত বছর শেষ হওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনে কিলোমিটারপ্রতি গড় ব্যয় ১৯ কোটি ৮৫ লাখ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পে ২০ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
জানতে চাইলে সওজের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, কুমিল্লা-ময়নামতি চার লেন প্রকল্পটির জন্য জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনেই বড় অংশ অর্থ ব্যয় হবে। এ ব্যয় বাদ দিলে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় অনেক কম হবে। এছাড়া এলওসিতে সীমিত দরপত্র আহ্বান করতে হয়। এতে ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশের ঠিকাদাররা অংশগ্রহণ করতে পারে না। ফলে ব্যয় কিছু বেশি হতে পারে। এর ভিত্তিতে প্রকল্পটির ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত বছর জানুয়ারিতে চলমান ও নতুন বিভিন্ন চার লেন প্রকল্পের কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় জানতে চায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। এজন্য সংসদীয় কমিটিতে জমা দেওয়া সওজের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইউরোপে চার লেনের নতুন মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ২৮ কোটি টাকা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ ব্যয় ১০ কোটি টাকা। আর চীনে তা গড়ে ১৩ কোটি টাকা।
এ হিসাবে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয়ের ভিত্তিতে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাসড়ক। আর কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া চার লেন হবে দ্বিতীয় ব্যয়বহুল মহাসড়ক।
যদিও শেষ পর্যন্ত এ ব্যয় আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সওজের প্রকৌশলীরা। তারা বলছেন, এর আগে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন প্রকল্পে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯১ কোটি টাকার কিছু বেশি। তবে তিন দফা বেড়ে তা শেষ পর্যন্ত ১২৪ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া চার লেনের ব্যয়ও বাড়তে পারে। বিশেষত জমি অধিগ্রহণে অনেক সময় ব্যয় প্রাক্কলনের চেয়ে বেশি হয়। এছাড়া বাস্তবায়ন বিলম্বে নির্মাণ শুরুর পরও প্রকল্প ব্যয় বাড়ে। ফলে শেষ পর্যন্ত কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া চার লেনই বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল চার লেন হয়ে যেতে পারে।