মৌলভীবাজারে বাণিজ্যমন্ত্রী

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলেছে সীমান্ত হাট

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, সীমান্ত হাট বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উম্মোচন করেছে। এ হাট উভয় দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। ভারত-বাংলাদেশের শুধু প্রতিবেশী দেশই নয়, বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। উভয় দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন একই। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা এবং ভারতের শহিদ যোদ্ধাদের বাংলাদেশ কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এ ত্রিপুরায় বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ শরণার্থী আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বাণিজ্যমন্ত্রী গতকাল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগ আয়োজিত মৌলভীবাজার জেলার কুরমাঘাট এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ঢালাই জেলার কামালপুর সীমান্তে সীমান্ত হাটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং ত্রিপুরা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী মোনজ কান্তি দেব ভারতের পক্ষে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত এলাকায় কুড়িগ্রাম, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সুনামগঞ্জে চারটি সীমান্ত হাট চালু হয়েছে। উভয় দেশের সীমান্ত এলাকার মানুষ এর সুফল ভোগ করছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে মৌলভীবাজারের কুরমাহাট এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কামালপুর সীমান্তে সীমান্ত হাটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন একটি ঐতিহাসিক কাজ। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় সীমান্ত হাট স্থাপনের বিষয়ে উভয় দেশ একমত হয়।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তরাঞ্চলে রপ্তানি বাণিজ্যের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। বাণিজ্য সুবিধা বাড়ানো হলে উভয় দেশ উপকৃত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। ভারতের উত্তরাঞ্চলের রাজ্যের সঙ্গে কম খরচে বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে উভয় দেশ উপকৃত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন একটি দেশের স্বাধীনতা, অপরটি বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা। তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আজ তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেথ হাসিনা দেশকে সোনার বাংলা গড়ার পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন।’

টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বেশ ভালো। ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার। বিগত ১০ বছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য অনেক বেড়েছে। ১০ বছর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে। ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরও বাড়বে। আমার বিশ্বাস, চলমান সীমান্ত হাটগুলো থেকে উভয় দেশের সীমান্ত এলাকার মানুষ নিজেদের শাকসবজি, ফলমূল, মসলা, গামছা-লুঙ্গির মতো কাপড়, প্লাস্টিক পণ্য, মাছ, মেলামাইন পণ্য, মধু, তৈরি পোশাক, ক্রোকারি পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে করে উভয় দেশের মানুষের আন্তরিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, মৌলভীবাজর-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুস শহীদ এবং ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান টিংকু রায় বক্তব্য দেন।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে দুদেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণ, যাদের নিকটবর্তী কোনো হাটবাজার নেই, তাদের নিকট নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে সীমান্ত হাট স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে মোতাবেক ২০১০ সালের ২২ অক্টোবর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সীমান্ত হাট স্থাপনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, যা পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালে সংশোধন করা হয়।

সমঝোতা স্মারক অনুসারে ২০১১ সালের ২৩ জুলাই কুড়িগ্রাম সীমান্তে বালিয়ামারীতে প্রথম, ২০১২ সালের ১ মে  সুনামগঞ্জের ডলারোতে দ্বিতীয়, ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার পূর্ব মধুগ্রাম ও ছয়ঘড়িয়ার মধ্যবর্তী স্থানের সীমান্তে তৃতীয় এবং ২০১৫ সালের ৬ জুন ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার কসবা উপজেলার তারাপুর সীমান্তে চতুর্থ সীমান্ত হাট চালু হয়।

সীমান্ত হাট স্থাপনের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী সুনামগঞ্জের সায়েদাবাদ ও বাগানবাড়ি সীমান্ত হাট এবং সিলেটের ভোলাগঞ্জে সীমান্ত হাট উদ্বোধন করা হয়। এছাড়া আরও তিনটি সীমান্ত হাটের অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং আরও ছয়টি সীমান্ত হাট স্থাপন প্রক্রিয়াধীন।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা উল্লেখ করেন, সীমান্ত হাট স্থাপনের ফলে দুই দেশের সীমান্ত এলাকার লোকজন তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহজে বেচাকেনা করতে পারছে এবং অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া সীমান্তের দুপাশে বসবাসকারী জনসাধারণের মধ্যে হƒদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তারা আরও উল্লেখ করেন, সীমান্ত হাট স্থানীয় জনগণের মধ্যে যে উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে, তা বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুসংহত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০