নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে নির্মিত হতে যাচ্ছে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল। এর কার্যক্রম শুরু হলে সেটি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গেম চেঞ্জার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাই স্বামী।
গতকাল বেজা (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) মিলনায়তনে এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। মিরসরাইয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে সাব-জোন-১৯-এ ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মিত হচ্ছে।
এ উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর আগারগাঁও বিনিয়োগ ভবনে এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বেজার চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিক্রম কুমার দোরাই স্বামী বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক একই অঞ্চলের অধিবাসীর। আমরা একই জলবায়ু, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অংশীদার। ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ বাড়বে। বাংলাদেশে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও উৎপাদনমুখী বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতীয় কোম্পানি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ সুযোগটি কাজে লাগাবে। এটি হবে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গেম চেঞ্জার। যেকোনো সম্পর্কে অর্থনৈতিক বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে। বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ আরও বাড়লে সম্পর্কের ভিত মজবুত হবে।’
ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের জন্য গতকাল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাহিন্দ্রা ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্টের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে বেজা। বেজার পক্ষে ‘মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্প’-এর প্র্রকল্প পরিচালক মো. মোখলেসুর রহমান ও ভারতের মাহিন্দ্রা ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্ট লিমিটেডের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার শ্রীনিভাসান নিজ নিজ পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, এ উদ্যোগ এক বিশাল কর্মযজ্ঞের সূচনামাত্র এবং একটি পরিকল্পিত ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির মাধ্যমে তার সফল পরিসমাপ্তি ঘটবে। মাহিন্দ্রা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অভিজ্ঞতা ও কারিগরি জ্ঞানের সম্মিলনে একটি আন্তর্জাতিক মানের ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করা হবে।
বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশে আরও ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ বাড়াবেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ভারতের দূতাবাসের কর্মকর্তারা এবং এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও মাহিন্দ্রা ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্ট লিমিটেডের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, ৯০০ একর জমির ওপর ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলটি নির্মাণ করা হবে। এটি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে জি টু জি-ভিত্তিক দ্বিতীয় প্রকল্প। ২০১৫ সালের জুনে এজন্য দুই দেশের সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৬৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ভারতীয় নমনীয় ঋণ এলওসি-৩-এর আওতায় ১১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেবে এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। প্রকল্পের মূল কাজ ভ‚মি উন্নয়ন, সংযোগ সড়ক, প্রশাসনিক ভবন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, টেলিকমিউনিকেশন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টসহ অন্যান্য বিনিয়োগবান্ধব স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।
এর ডিজাইন ও সুপারভিশন কার্যক্রম বাস্তবায়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাহিন্দ্রা ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্টকে নিয়োগ দেয় বেজা। এতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাহিন্দ্রা ইঞ্জিনিয়ারিয়ং পাবে ২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আর ভারতীয় কোম্পানি আদানী পোর্টস অ্যান্ড এসইজেড লিমিটেড ভারত সরকারের নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। এজন্য ভারতের মুম্বাইয়ে গত ১ এপ্রিল ভারতের আদানী পোর্টস অ্যান্ড এসইজেড লিমিটেডের সঙ্গে একটি টার্ম শিট চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বেজা।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গেম চেঞ্জার হবে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল
