দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত সেলিম মিয়ার পরিবারের বর্তমান কর্তা তার স্ত্রী রমিছা বেগম। স্বামীর ক্যানসার হওয়ার পর থেকেই তাকে পরিবারের ঘানি কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে। দুটি সন্তানের ভরণ-পোষণ আর স্বামীর ওষুধের টাকা জোগাড় করতে ভোর ৪টা বাজে ঘুম থেকে উঠে বাসার কাজ সেরে বেরিয়ে পড়তে হয় নিজের কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে। ১৪ ঘণ্টা একটি পোশাক কারখানায় কাজ করে রাত ১০টায় বাসায় ফিরে সারা মাসে জুটে ১৮ হাজার টাকা। যার ওপর নির্ভর করে ঘর ভাড়া থেকে শুরু করে সন্তানের পড়াশোনা, স্বামীর ওষুধ, তরিতরকারি থেকে সব নিত্যপণ্য। কিন্তু বর্তমানে সব পণ্যের আকাশচুম্বী দামের জাঁতাকলে পিষছে রোজ রমিছা বেগম।
এত খাটাখাটুনি করে অর্জিত টাকা দিয়ে চলছে না সংসার। নিত্যপণ্য কিনতে বাকির খাতা খুলছেন রোজ। তবুও মিটছে না চাহিদা। যেখানে রোজগারে বাড়েনি, একটিও টাকা সেখানে দ্রব্যের দামে তাকে প্রতিনিয়ত গুনতে হচ্ছে আগের তুলনায় সর্বনিন্ম পাঁচ টাকা। এ অবস্থায় সংসার চালানো যে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা হয়ে পড়ছে, তা রমিছা বেগমের কপালের ভাঁজেই বোঝা যায়। সরকার কিংবা মালিক কি বুঝে কপালে দুঃখের ভাঁজের গল্প? এরকম শত রমিছার গল্প আজ শুধুই দ্রব্যমূল্যের আকাশচুম্বী দামের কাছে আর্তনাদ করছে, খেয়ে পরে বাঁচার। কারণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়ে নিন্ম আয়ের মানুষ ও প্রান্তিক মানুষগুলো। শুধু রমিছা বেগম নয়, তার মতো হাজারো মানুষ।
কিন্তু মাথাপিছু আয় বেড়ে গেছে। তবে মাথাপিছু আয় বেড়ে যাওয়ার গল্পের চেয়ে বেশি বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যের দাম। যার ফলে রমিছা বেগমরা আজ করুণ গল্পের নায়িকায় পরিণত হয়েছেন। মাস শেষে উপার্জিত টাকার সবটা চলে যাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে। ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় অন্য দ্রব্যসামগ্রী চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, গ্যাস, শাকসবজিসহ সব নিত্যপণ্যের দামকে আর আটকে রাখা যাচ্ছে না। কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পর্যাপ্ত নজরদারি নেই। ফলে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন বাহানা দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে রাখছে। পণ্য আগে কেনা এবং প্যাকেটে আগের দাম লেখা থাকলেও তা বিক্রি করছে বর্তমান মূল্যে।
এটি সীমিত ও নিন্ম আয়ে লোকদের বিপাকে ফেলছেন। কৃষকরাও দিশেহারা। একটি পরিবারের সুখ-শান্তি অনেকটা নির্ভর করে ওই পরিবারের আয়-ব্যয়ের ওপর। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে গেলেই নেমে আসে অশান্তির কালো ছায়া। যে হারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, তাতে মধ্যবিত্তরাও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। সব কিছুর দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় আরও বিপদ আসতে চলেছে। কৃষকরা চাষাবাদে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ। উন্নত বীজ, পর্যাপ্ত সেচ, সারের ব্যবস্থা করলে কৃষকদের আগ্রহ ও মনোবল বাড়ানো সম্ভব।
বাজারে সব জিনিসই পাওয়া যায়। শুধু পাওয়ার মাধ্যমটা একটু বদলে গেছে। আগের চেয়ে বেশি টাকা দিলেই মিলছে সব পণ্য। বোঝা যাচ্ছে, বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য মজুত আছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানো। সাধারণ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে অসাধু ব্যবসায়ীদের থামাতে হবে। ভোক্তাসাধারণকেও সতর্ক থাকতে হবে। অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ী চিহ্নিতকরণে কিংবা তাদের আইনের আওতায় নিতে কর্তৃপক্ষকে সাহায্য, সহযোগিতা করতে হবে।
লাইজু আক্তার
শিক্ষার্থী, নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ