Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 12:40 pm

দ্রুত অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হোক

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে গত সোমবার শেখ হাসিনার পদত্যাগের মাধ্যমে দেশের শাসন কাঠামোতে এক ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। সংবিধানের ৫৮(ক) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হওয়ার পর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা স্থগিত হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রের রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে কীভাবে, সে বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করে যেতে পারবেন। কিন্তু পদত্যাগ করে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়েছেন। তাহলে এখন কী হবে?

এমন পরিস্থিতিতে সার্বিক দায়িত্ব বর্তায় রাষ্ট্রপতির ওপর। দেশের সামরিক আইনে রাষ্ট্রক্ষমতা ‘টেকওভার’ করার বিধান না থাকায় এখন রাষ্ট্রপতিকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যদিও এ বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট করে কিছু উল্লেখ নেই, তা সত্ত্বেও বাস্তবতার নিরিখে দেশের আপামর জনসাধারণ মোটামুটি একমত যে, আগের তত্ত্বাবধায় সরকারের আদলে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্বভার গ্রহণ করুক। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিসহ রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উচিত দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়া। কারণ দেশে বর্তমানে কোনো সরকার নেই। কাজেই এখন পুরো বিষয়টি আমলাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু আমলাদের কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের এক্তিয়ার নেই। তাছাড়া একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অনুগত হিসেবে পরিচিত অনেক আমলাও চাকরি হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন। এছাড়া অনেকে সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে এখনও শঙ্কিত। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুততার সঙ্গে একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক।

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর দুদিন অতিবাহিত হতে চলল। দেশ কার্যত সরকারবিহীন অবস্থায় রয়েছে। বর্তমানে নির্বাহী বিভাগ রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত। তাই তাকেই এ বিষয়ে সার্বিক পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে তা হচ্ছে, সরকার পতনের আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণ। এ কথা সত্যি যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন পরিচালিত হয়ে আসছিল। সেই কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে ছাত্রসমাজ। অনেক প্রাণহানি ও রক্তক্ষয়ের পর সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। কাজেই ছাত্রদের মতামত নেয়া গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে তারা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা প্রদান করেছেন। তারা একজন প্রধান উপদেষ্টার নামও প্রস্তাব করেছেন। সেসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে একটি সরকার গঠন করা প্রয়োজন।

কেননা দীর্ঘসময় এমন সরকারবিহীন অবস্থায় থাকলে নানা স্বার্থান্বেষী মহল সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করতে পারে। এমনকি দেশের বাইরে থেকেও অনেকে তেমনটি করার চেষ্টা করতে পারে। অতীতে বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে এমন উদাহরণ রয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই সরকার একটি সুবিধাজনক সময়ে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেÑএমনটিই জাতির প্রত্যাশা। সে অনুযায়ী বর্তমানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কাজ করবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।