নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজার সপ্তাহের ব্যবধানে সূচকের বৃদ্ধির মাধ্যমে গত সপ্তাহ পার করছে। এতে তিন সপ্তাহ ধরে উত্থান হয়েছে পুঁজিবাজারে। তার আগের দুই সপ্তাহ পুঁজিবাজারে পতন হয়েছিল। সপ্তাহটিতে সূচকের সঙ্গে লেনদেন বেড়েছে ১৯ শতাংশ। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত ছিল। দ্রুত মুনাফার আশায় বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার চাপ গুজবভিত্তিক জাঙ্ক শেয়ারে থাকায় বাজারে উত্থান হয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন বিনিয়োগকারী বাজারসংশ্লিষ্টরা। এ সময় বেশ কিছু জাঙ্ক শেয়ার ফ্লোর ভেঙে দর বাড়তে থাকলে বিনিয়োগকারীদের কেনার আগ্রহ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে সপ্তাহের মাঝে বিনিয়োগকারীদের সেই শেয়ারের মুনাফা সংগ্রহের কারণে পতন হতে দেখা যায়। ফলে সপ্তাহজুড়ে শেয়ার কেনা ও বেচা উভয় দিক থেকেই চাপ ছিল বলে জানান তারা। আলোচ্য সপ্তাহে পাট খাতের শেয়ার কেনায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি ছিল। এছাড়া গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপ থাকায় বিমা খাতের দর সবচেয়ে বেশি কমেছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, আগের সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ২৫৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগের সপ্তায় লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৫৮৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৫১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৭১৭ কোটি
১৪ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ৭০টির, দর কমেছে ২৩টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯৪টি কোম্পানির। লেনদন হয়নি ১২টি কোম্পানির শেয়ার। সপ্তাহে সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইএক্স ৬ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩৪১ দশমিক ১০ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ৫ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৪ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ হাজার ১৯৭ দশমিক ৩ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৭৯ দশমিক ৪২ পয়েন্টে।
পুঁজিবাজারে কিছু সুবিধাবাদী বিনিয়োগকারী দ্রুত মুনাফার আশায় ফ্লোর প্রাইস থেকে বেরিয়ে আসা গুজবভিত্তিক জাঙ্ক শেয়ারে কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। এতে বাজারে কেনার চাপের আধিপত্য ছিল; ফলে সপ্তাহ শেষে সূচক ও লেনদেন উভয়ই বেড়েছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীরা কেনাবেচা উভয় দিকে সক্রিয় থাকায় বাজারে সপ্তাহজুড়ে কিছুটা অস্থিরতাও অনুভব করা গেছে।
সতর্ক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে আনরিয়ালাইজড মুনাফা সংগ্রহের কারণে বিক্রির চাপ থাকা সত্ত্বেও বাজারে ক্রেতাদের অবস্থান শীর্ষে ছিল। কারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ও কেনার চাপ বেশিরভাগই জাঙ্ক শেয়ারে হওয়ায় বিক্রির চাপের মধ্যেও শেষ পর্যন্ত বাজার ইতিবাচক অবস্থায় শেষ হয়েছে। এদিকে গত সপ্তাহে আগ্রহ বেশি থাকা পাট খাতের শেয়ারদর বেড়েছে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। এরপর দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে গত সপ্তাহে দর বেড়েছে ১ দশমিক ৮০ শতাংশ। ১ দশমিক ৩০ শতাংশ দর বৃদ্ধি পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল সিরামিক খাতের শেয়ার। এছাড়া গত সপ্তাহে বিক্রির চাপ সবচেয়ে বেশি থাকা বিমা খাতের শেয়ারদর কমেছে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ। ১ দশমিক ১০ শতাংশ শেয়ারদর কমে দ্বিতীয় স্থানে ছিল সেবা ও আবাসন খাত। তৃতীয় স্থানে থাকা আইটি খাতের শেয়ারদর কমেছে শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ।
গত সপ্তাহে লেনদেনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে। গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। এরপর দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিমা খাতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ লেনদেন হয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল বস্ত্র খাত।
গত সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৩১ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহের শেষে পিই রেশিও দাঁড়িয়েছিল ১৪ দশমিক ৩১ পয়েন্ট ছিল।