দ্রুত মুনাফার পেছনে বিনিয়োগকারীরা: অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির দাপটে তিন কোম্পানি

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: মৌলভিত্তিতে পিছিয়ে থাকলেও লাফিয়ে লাফিয়ে দর বাড়ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিনটি কোম্পানির। এর মধ্যে একটি ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিও রয়েছে। বাকি দুটি ‘জেড’ ক্যাটাগরির। কোম্পানি তিনটি হচ্ছে- প্রকৌশল খাতের ‘এ’ ক্যাটাগরির ‘রেনউইক যজ্ঞেশ্বর’ এবং খাদ্য খাতের ‘জেড’ ক্যাটাগরির ‘জিল বাংলা সুগার মিল’ ও ‘শ্যামপুর সুগার মিল’। দিনের পর দিন এসব শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির দাপট বেড়েই চলেছে। গত এক বছরের ব্যবধানে এসব কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ২৬২ শতাংশ থেকে ৮৬০ শতাংশ পর্যন্ত।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে অনেক ভালো ভালো শেয়ার থাকলেও স্বল্প সময়ে দ্রুত মুনাফার পেছনে  ছোটেন এক শ্রেণির অসচেতন বিনিয়োগকারী। আর এর সুযোগ নেন এক চতুর বাজার খেলোয়াড়রা। এসব ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দ্রুত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। তারা কেবল মাঝে-মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেই দায়িত্ব এড়িয়ে যান।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রেনউইক যজ্ঞেশ্বর ছাড়া অপর দুটি দীর্ঘদিন থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে। এসব শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত (পিই) ৪০-এর বেশি হওয়ার ফলে এগুলো নন-মার্জিনেবল।

নিয়মানুযায়ী, শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) কিংবা সম্পদের বিবেচনায়ও এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর অস্বাভাবিক। ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় এসব শেয়ার ক্রয়ে ব্রোকার হাউস বা মার্চেন্টগুলো ঋণ দেয় না। কিন্তু তারপরও এসব কোম্পানির শেয়ার দর প্রতিনিয়ত বাড়ছে। যাকে ‘ব্যাকরণ বহির্ভূত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এসব কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এসব শেয়ারের দর বৃদ্ধি কখনোই বাজারের জন্য ভালো খবর হতে পারে না। বরং এই শেয়ারগুলো পুঁজিবাজারের পরিবেশ পাল্টে দেয়। বিনিয়োগকারীরা না বুঝে অনেক সময় এসব শেয়ারের পেছনে ছোটেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এর ফল শুভ হয় না। তাই বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নরজদারি বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদেরও সতর্ক থাকতে হবে। তারা সতর্ক থাকলে তাদের পুঁজিও নিরাপদে থাকবে।’

বাজার চিত্রে দেখা যায়, এক বছর আগে রেনউইক যজ্ঞেশ্বরের শেয়ারের দর ছিল ২৩৪ টাকা। বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে ৮৬২ টাকায় লেনদেন হয়। অর্থাৎ প্রতি শেয়ারে দর বাড়ে ৬২৮ টাকা বা ২৬২ শতাংশ। একইভাবে ৫ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৩১ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়। বছরের ব্যবধানে শেয়ারের দর বাড়ে ৫৪০ শতাংশ।

অন্যদিকে এক বছরের ব্যবধানে জিল বাংলা সুগারের শেয়ারের দর বেড়েছে ৪৪ টাকা বা ৪৬০ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে এ কোম্পানির শেয়ার ৫ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে সর্বোচ্চ ৪৯ টাকায় লেনদেন হয়।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে শ্যামপুর সুগারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘বিনিয়োগকারীরা কেন আমাদের কোম্পানির শেয়ারে আকৃষ্ট  সেটা তারাই বলতে পারবেন। শেয়ারের দর কেন বাড়ছে বা কমছে, সেটা কোম্পানির জানার কথা নয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এসব শেয়ারের দর বৃদ্ধির প্রসঙ্গে বলেন, বাজারে অনেক ভালো ভালো শেয়ার থাকলেও স্বল্প সময়ে দ্রুত মুনাফার পেছনে ছোটেন এক শ্রেণির অসচেতন বিনিয়োগকারী। এটি বাজারের জন্য সুখের খবর নয়। তবে বিনিয়োগকারীরা এটা সব সময়  বোঝেন না। আর এর সুযোগ নেন চতুর বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের নিরাপদে রাখার দায়িত্ব বিএসইসি’র। এসব ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দ্রুত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। তারা কেবল মাঝেমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেই দায়িত্ব এড়িয়ে যান। তারা যদি নামমাত্র দায়িত্ব পালন করেন তাহলে বাজারের সার্বিক অবস্থার পরিবর্তন হবে না।

একই প্রসঙ্গে স্টার্লিং সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দীন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কোনো বিশেষ খবর কিংবা গুজবে অনেক সময় এসব শেয়ারের দর বাড়তে দেখা যায়। কিন্তু আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় এসব শেয়ারের দর বেশিদিন স্থায়ী হয় না। বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের সব সময় খেয়াল রাখা দরকার।’

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০