দ্রুত মুনাফার পেছনে বিনিয়োগকারীরা: আগ্রহ কম বিনিয়োগ উপযোগী ১০ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ ও পলাশ শরিফ: স্থিতিশীল মজবুত আর্থিক ভিত্তি ও বছর শেষে আকর্ষণীয় নগদ লভ্যাংশ প্রদানের কারণে পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের চাহিদা বরাবরই অন্যান্য যে কোনো খাতের শেয়ারের তুলনায় বেশি। কিন্তু এ খাতের শেয়ার যখন কোনো কারণ ছাড়াই উপেক্ষিত হয়, তখন বাজারের স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতি ও বিনিয়োগকারীদের মনোভাব নিয়ে এক ধরনের ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়। হতে পারে এটাও এক ধরনের বাজার কারসাজি। বিনিয়োগকারীরা ব্যবহৃত হচ্ছেন দাবার ঘুঁটির মতো। সর্বনিম্ন মূল্য-আয় অনুপাতের (পিই) দিক থেকে বর্তমানে বাজারে বিনিয়োগ করার মতো ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অন্তত ১০টি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে বিনিয়োগকারীরা মেতে আছেন অপেক্ষাকৃত দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারে। এসব কোম্পানির কোনোটির পিই রেশিও দুই হাজারের কাছাকাছি।
কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি বিশ্লেষণে দেখা যায়, সর্বনিম্ন মূল্য-আয় অনুপাতে (পিই) শীর্ষে রয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের এমন ১০টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে: মার্কেন্টাইল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, এসআইবিএল, ইউসিবি, উত্তরা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, এনবিএল, ইবিএল, উত্তরা ফাইন্যান্স ও আইডিএলসি। মৌলভিত্তির দৌড়ে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও তালিকাভুক্ত এসব কোম্পানির শেয়ারে আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের। শেয়ারপ্রতি আয়, সম্পদ ও পিই রেশিও বিবেচনায় এসব কোম্পানির শেয়ারের দর অবমূল্যায়িত হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তাদের অভিমত, বাজারের তালিকাভুক্ত দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের যে দর ও চাহিদা রয়েছে, সে তুলনায় উল্লিখিত কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর অনেক কম। এসব কোম্পানির মৌলভিত্তির বিচারে যেমন এগিয়ে রয়েছে তেমনি বছর শেষে ভালো লভ্যাংশ প্রদান করছে। সে কারণে এসব শেয়ারের চাহিদা কমার কথা নয়। কিন্তু তা-ই হচ্ছে। যা কিনা মৌলভিত্তির বিচারে স্বাভাবিক বাজারের উল্টোচিত্র বলা যায়।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে আইডিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা সব সময়ই বলে থাকি বিনিয়োগকারীরা যেন ভালো কোম্পানির সঙ্গে থাকেন। কিন্তু বাস্তব চিত্র এর উল্টো। আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই গুজব ও অন্যের কথা শুনে বিনিয়োগ করেন। যে কারণে অনেক সময় ভালো কোম্পানির শেয়ারের দরে ঘাটতি দেখা যায়। তবে এটা খুবই সাময়িক। ভালো কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা সব সময় ছিল আগামীতেও থাকবে।’
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে পুঁজিবাজারে সবচেয়ে কম পিই রয়েছে সাউথ ইস্ট ব্যাংকের। ব্যাংকটি বর্তমান শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত রয়েছে ৬ দশমিক ৫১। একইভাবে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পিই রয়েছে ৬ দশমিক ৫৪। এছাড়া এসআইবিএলের ৭ দশমিক শূন্য ছয়, ইউসিবিএলের ৮ দশমিক ৫৩. উত্তরা ব্যাংকের ৭ দশমিক ৩০, ওয়ান ব্যাংকের ৮ দশমিক ৪৪, এনবিএলের ৮ দশমিক ৯৫ এবং ইবিএলের পিই রয়েছে ৮ দশমিক ৫৯। অন্যদিকে আর্থিক খাতের কোম্পানি উত্তরা ফাইন্যান্সের শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত সাত দশমিক ৭২ এবং আইডিএলসির পিই রেশিও রয়েছে ৯ দশমিক ৩৪। মৌলভিত্তির বিবেচনায় এসব কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদও রয়েছে সন্তোষজনক। তালিকায় থাকা এসব কোম্পানির মধ্যে সর্বনিম্ন পিই রয়েছে এসআইবিএলের । যার পরিমাণ ১৮ টাকা ৪২ পয়সা। আর সবচেয়ে বেশি পিই রয়েছে উত্তরা ফাইন্যান্সের। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি মূল্য আয় অনুপাতের পরিমাণ ৪১ টাকা ৭০ পয়সা।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব কোম্পানির প্রতি তুলনামূলকভাবে আগ্রহ না থাকার কারণ হচ্ছে- বিনিয়োগকারীদের অসচেতনতা। কারণ বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই থাকতে চান যেখানে দ্রুত লাভ হবে, এমন সব কোম্পানির শেয়ারের সঙ্গে। ফলে তারা ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করে ঝুঁকে পড়েন অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘আমি মনে করি, যেসব কোম্পানির শেয়ারে পিই রেশিও ভালো, সেই সঙ্গে এর আর্থিক অবস্থাও সন্তোষজনক, বিনিয়োগকারীদের সেই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা উচিত। কারণ এসব কোম্পানি থেকে বছর শেষে ভালো কিছু আশা করা যায়। পক্ষান্তরে যে সকল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয় সেসব কোম্পানিতে কালেভাদ্রে লাভ হলেও ঝুঁকির শঙ্কাই বেশি থাকে।’

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০