দ্রুত সম্পন্ন হোক শেয়ার অফলোড প্রক্রিয়া

ভালো অবস্থানে থাকা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি কোম্পানিকে শেয়ার অফলোডে নির্দেশ দেওয়া হলেও এটি তারা কেন পরিপালন করেনি, তার বেশকিছু কারণ উঠে এসেছে গতকালের শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে। তাতে বোঝা যায়, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিগত সিদ্ধান্তহীনতাই শুধু নয়, কাঠামোগত কিছু সমস্যাও ভূমিকা রেখেছে এ পরিস্থিতি সৃষ্টিতে। আরেকটি বিষয় স্পষ্ট, এর মাধ্যমে সরকারি সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ তথ্য হতবাক করবে অনেককে। বস্তুত দেশের পুঁজিবাজারে শুধু ভালো শেয়ার জোগাতে নয়, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ আকর্ষণেও এমন কোম্পানির আসা দরকার। তাহলে এর স্থিতিশীলতা যেমন দীর্ঘস্থায়ী হবে, তেমনি সুফল পাবেন বিনিয়োগকারীরা। স্বল্প সময়ে দর ওঠানামায় বিনিয়োগ ঝুঁকি যেভাবে বেড়ে ওঠে, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির ভালো শেয়ারের প্রভাবে তা কিছুটা কমে আসবে। এজন্য যেসব কোম্পানিকে শেয়ার অফলোডের নির্দেশ এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নে নেওয়া উচিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।

প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, শেয়ার অফলোডে একাধিকবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি কোম্পানিকে। এরপরও তারা নির্দেশ বাস্তবায়ন করেনি। আমরা জানি, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় সরকার গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে। সে অনুযায়ী এমন ধারায়ই ওইসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হওয়ার কথা। এ অবস্থায় স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, যেসব প্রতিষ্ঠান শেয়ার অফলোডের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেনি, তাদের এমন অবস্থানের প্রকৃত কারণ কী? এটা কি নিছক প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ বিবেচনায়, নাকি নির্দেশ পরিপালনে বিরত থাকার পেছনে রয়েছে ব্যক্তিবিশেষের স্বার্থ? উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়নহীনতার জন্য যারা দায়ী, যৌক্তিকতা বিশ্লেষণপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হোক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের যে কয়েকটি কোম্পানির তথ্য শেয়ার বিজে তুলে ধরা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছেÑসবার বক্তব্য প্রায় কাছাকাছি। এক্ষেত্রে সিন্ডিকেশন প্রবণতা কাজ করছে কি না, খোঁজ নেওয়া দরকার। যদি সত্যিই এমন কিছু হয়ে থাকে, তাহলে এ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার সম্ভাব্য পথগুলোও বাতলাতে হবে নীতিনির্ধারকদের।

আগামী ৫ এপ্রিল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন অর্থমন্ত্রী। এ উদ্যোগ সময়োপযোগী। সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়নে বিরত থাকার অন্তর্নিহিত অন্যান্য কারণও হয়তো উঠে আসবে ওই আলোচনায়। প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এমন আলোচনা আগেও হয়েছে। আমরা মনে করি, কাঠামোগত ক্ষেত্রে কী পরিবর্তন আনলে তাদের পক্ষে এ-সংক্রান্ত নির্দেশ বাস্তবায়ন সহজে সম্ভব, সে বিষয়েও খোলামেলা আলোচনা হওয়া দরকার। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী ওইসব প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরবেন বলে আশা। প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কার দ্রুত হলে কোম্পানিগুলোর শেয়ার অফলোড প্রক্রিয়াও শিগগির সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত যেসব কোম্পানি ভালো মুনাফা করছে, তারা পুঁজিবাজারে এলে এখান থেকে সুবিধা নিতে পারবেন বিনিয়োগকারীরা। আর ভালো কোম্পানির অন্তর্ভুক্তির কারণে বাজারের চাঙ্গা ও স্থিতিশীল অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে তার প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। অনেক বিশ্লেষক এখন স্বীকার করেন, স্থিতিশীলতা থাকা সত্ত্বেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা এখন সন্ত্রস্ত থাকছেন নানা কারণে। পোর্টফোলিও গঠনে কোম্পানি বাছাইয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে এ-বাজার সম্পর্কিত জ্ঞানসম্পন্ন বিনিয়োগকারীদেরও। এর প্রভাবও যে বাজারে নানাভাবে পড়ছে, তা লক্ষ করা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। মুনাফার ধারায় থাকা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো যে বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা কমাতে সক্ষম, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই বিশ্লেষকদের। এজন্য আমরা চাই, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর শেয়ার অফলোড প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হোক। ভালো শেয়ারে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়–ক পুঁজিবাজারে। বাজারটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতেও সরকারি এ উদ্যোগ সহায়ক হবে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০